ঢাকা
৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:৪৮
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

হাতিয়ায় দুই প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

ছায়েদ আহমেদ, হাতিয়া(নোয়াখালী) প্রতিনিধি: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা প্রাথমকি শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়ত্বি) মোঃ আঃ জব্বার টাকার বিনিময়ে অধীনস্থ সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.বি.এম. নুরেজ্জমানের হাজিরা স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে নৈমত্তিক ছুটি লিখে দেয়া এবং নানা অপকৌশলে শিক্ষকদের বেতনের টাকা আত্মসাৎ সহ প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আ: জব্বার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ হাতিয়াতে যোগদানের পর থেকেই তিনি এ সকল অনিয়ম করে আসছেন। তার অনিয়মের  সহযোগী- উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক (ইউডিএ) নাজিম উদ্দিন হাতিয়াতে যোগদানের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী (আউট সোর্সিং) পদে নিয়োজিত ৯৭জন কর্মচারীর বেতন বিল মাস শেষে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে পাঠানোর কথা থাকলেও পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের পরেও পাঠানো হয় না বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী কর্মচারীরা।

তারা জানান, সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ পার হয়ে গেলেও আগষ্ট মাসের বেতন ভাতাদি এখনো তারা পাননি। বেতন সংক্রান্তে আমরা অফিসে গেলে আমাদেরকে মানুষের মতো আচরণ করা হয় না, অফিসের নানান জটিলতা দেখিয়ে নাজিম উদ্দিন  আমাদেরকে হয়রানি করেন।

হাতিয়া উপজেলার পিটিআই (ডিপিএড/সিইনএড) প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রায় ৬০০ শিক্ষকের নিম্নধাপ থেকে উচ্চধাপে বেতন নির্ধারণ সহ বকেয়া বিল প্রদানের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, আ: জব্বার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা এ.বি.এম. নুরেজ্জমান, উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক (ইউডিএ.) নাজিম উদ্দিন ও শিক্ষা অফিসের হয়ে ঘুষ আদায়ের কাজে নিয়োজিত এজেন্ট- সহকারী শিক্ষক এনায়েতে রাব্বীর বিরুদ্ধে কোটি টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এসকল অনিয়মের বিষয়ে সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ এ প্রতিবেদনে যে সকল শিক্ষকদের মন্তব্যের জন্য কল করা হয়, ওই শিক্ষকদের অফিস কক্ষে একজন করে ডেকে এনে শিক্ষা কর্মকর্তা আ. জব্বার ও ইউডিএ, নাজিম উদ্দিন নানা কৌশলে ম্যানেজ করে- মন্তব্যের বিপরীতে অভিযুক্তদের পক্ষে লিখিত নেওয়ার চেষ্টা করা সহ বিভিন্ন অপকৌশল গ্রহণ করে। যা অনিয়মকারীদের অনিয়মগুলোকে ঢাকা দেওয়ার জন্য আরেকটি অপপ্রয়াস মাত্র।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এ.বি.এম. নুরেজ্জমান ২০ জুন ২০২৩ হাতিয়াতে যোগদানের পর থেকে প্রায়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে ক্ষেত্রবিশেষ সিএল, ছুটি গ্রহণ সহ নানাবিধ অনিয়ম করে আসছেন। বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা আ: জব্বারের যোগদানের পর থেকে তার অনিয়মের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি৪) আওতায় হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নব নিয়োগপ্রাপ্ত ১৬ জন সহকারী শিক্ষকের ১৫ দিনব্যাপী প্রাক-প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পঞ্চম ব্যাচের প্রশিক্ষণ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ শুরু হয়। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম নুরেজ্জমান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

২৫ এপ্রিল ছিল প্রশিক্ষণের অষ্টম দিন বৃহস্পতিবার। প্রশিক্ষক এবিএম. নুরেজ্জমান এ দিন যথানিয়মে হাজিরায় স্বাক্ষর করে কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করে নিজ বাড়িতে চলে যান। পরদিন (২৬ এপ্রিল) থেকে প্রশিক্ষণের ১৩ তম দিন (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত ০৫দিন প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত থেকে সেখানে অবস্থান করেন। ০২ মে থেকে প্রাক-প্রাথমিক প্রশিক্ষণের শেষ হওয়ার পরের দিন (০৪ মে) পর্যন্ত ০৩দিন সুপারিনটেনডেন্ট মাইজদী পিটিআই নোয়াখালী- ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে পত্র নং-৩৮.০১.৭৫০০.০০০.২৫.০০৮.২১-১৫৪ মোতাবেক তিনি পরিমার্জিত ডিপিএড. (বিটিপিটি) কার্যক্রমের মনিটরিং, মেন্টারিং ও মূল্যায়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে মাইজদী পিটিআইতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষা কর্মকর্তা আ: জব্বারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ইউআরসির প্রাক-প্রাথমিক প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি গোপন রেখে মাইজদী পিটিআই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। সে সাথে উভয় জায়গা থেকে অবৈধভাবে প্রশিক্ষকের ও প্রশিক্ষণার্থীর পুরো ব্যাচের সম্মানি ভাতা উত্তোলন করেন।

প্রশিক্ষক নুরেজ্জমান প্রাক-প্রাথমিক প্রশিক্ষণের উপস্থিতি না দিয়ে তিনি প্রশিক্ষণের হাজিরা খাতা খালি রেখে দেন। দুই জায়গা থেকে পুরো প্রশিক্ষণ ভাতার টাকা নেওয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি এমনটা করেছেন।  প্রাক-প্রাথমিক প্রশিক্ষণে ১ হাজার ২০০ টাকা উৎস কর কর্তন পূর্বক ১৫ দিনের প্রশিক্ষকের ভাতা বাবদ ১৫ হাজার টাকা ও মাইজদী পিটিআইতে ০৩দিনের প্রশিক্ষণে যাবতীয় খরচাদী বাবদ ৭২০ টাকা কর্তন পূর্বক ৮ হাজার ৮৭০ টাকা উঠিয়ে নেন।

দাপ্তরিক ডকুমেন্টস ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, শিক্ষা কর্মকর্তা আ: জব্বারকে মাসোয়ারা দিয়ে বেশিরভাগ সময় শিক্ষা কর্মকর্তা এ.বি.এম. নুরেজ্জমান কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে নিজ বাড়িতে থাকেন। তবে এরই মধ্যে গত মে,২০২৪খৃ: থেকে কিছুদিন শিক্ষকদের ঘিরে অবৈধ ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে এই শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও বর্তমানে তাদের উভয়ের যোগসাজসে নানাবিধ অফিসিয়াল অনিয়ম চলে আসছে।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নুরেজ্জমান প্রায়ই বৃহস্পতিবার সকালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করে একই জেলার কবিরহাট উপজেলায় তার নিজ বাড়িতে চলে যান। ২৪ ও ২৫ মে, ২০২৪ (শুক্রবার-শনিবার) নিজ বাড়িতে সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ শেষে খোলার দিন ২৬ ও ২৭ মে, ২০২৪খৃঃ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। মঙ্গলবার ২৮ মে, কর্মস্থলে এসে এই দিনের হাজিরা দিলেও শিক্ষা কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের জেরে এবার আর আগের মতো নুরেজ্জমানের পেছনের তারিখের অনুপস্থিত দুই দিনের স্বাক্ষর দেওয়ার সুযোগ হয়নি। ফলে ওই দুই দিনের ঘরে শিক্ষা কর্মকর্তা আ: জব্বার- নুরেজ্জমানের হাজিরা খাতায় লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত দেয়। আবার পরের সপ্তাহে ০৬ জুন, ২০২৪ বৃহস্পতিবার সকালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে এই কর্মকর্তা একইভাবে নিজ বাড়িতে চলে যান। ০৯ জুন ২০২৪ রবিবার অফিস খোলার দিন কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষা কর্মকর্তা আ. জব্বার তাকে এদিনের ঘরে লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত দেয়। এভাবে একাধিকবার চললেও এরই মধ্যে শিক্ষা কর্মকর্তারা নিজেদের দ্বন্দ্বের অবসান করলে আঃ জব্বার নগদ টাকা নিয়ে নিয়মবহির্ভূত পেছনের তারিখ দিয়ে অনুপস্থিত দিনের নৈমিত্তিক ছুটি প্রদান করে হাজিরা খাতায় অনুপস্থিতিকে মুছে সিএল ছুটি লিখে দেয়। এবং মাস শেষে এ.বি.এম. নুরেজ্জমানকে পুরো মাসের বেতন ভাতাদি দিয়ে দেন। 

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম নুরুজ্জমান নৈমিত্তিক ছুটির বিষয়টি স্বীকার করলেও বাকী অভিযোগ সম্পর্কে তার জানা নাই বলে মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আ: জব্বার জানান, এটিইও নুরুজ্জমান ওই সময় চরের স্কুল সমূহে ভিজিটে থাকতে পারেন।

প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক ড. মো: শফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, যাদের বিরুদ্ধে হোক লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram