রাষ্ট্রের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য ঘোষিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের কাজ আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কমিশন প্রধানরা গতকাল রবিবার পর্যন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে কি না, কাদের কমিশনের সদস্য করা হচ্ছে—এসব জানেন না। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কমিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়া এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কার্যক্রমও নেই। তাঁরা আশা করছেন, আজ-কালের মধ্যে এই বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ বিষয়ে বলেন, ‘আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই পরিপত্র জারি করা হবে। পরিপত্রেই জানিয়ে দেওয়া হবে কারা সংস্কার কমিশনগুলোর সদস্য হবেন।’
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, জুলাই গণ-অভ্যত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করতে সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজনে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনে সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কারে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারে ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কারে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কারে ড. শাহদীন মালিককে সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ওই দিন বলেন, এসব কমিশন পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে এবং তিন মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিকসমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে বলেও ভাষণে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সংস্কার কমিশন ঘোষণার এক সপ্তাহ পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিকের পরিবর্তে অধ্যাপক আলী রিয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানায়।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল রবিবার বলেন, ‘সংস্কার কমিশনে আর কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা আমি এখনো জানি না। আমার জানার কথাও না। আমি অপেক্ষা করছি।
আশা করছি যত শিগগির সম্ভব কাজ শুরু করতে পারব। ১ অক্টোবর থেকে যদি কাজ শুরু করতে হয় তাহলে তার আগেই জানতে পারব। সময় তো বেশি নেই। আবার ১ অক্টোবর শুরু না হয়ে কিছুটা দেরি হলেও অসুবিধা নেই। যাঁদের কমিশনে নেওয়া হবে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার সময় তো লাগবে। প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করব বলে আশা করছি।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন বলেন, কমিশনের সদস্য কতজন হবে, কারা হবেন—এসব বিষয়ে এখনো বলার মতো অবস্থা হয়নি। পরে সব কিছুই জানানো হবে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান বলেন, ‘পত্রিকায় এসেছে ১ অক্টোবর কাজ শুরুর কথা। দেখি কী হয়।’
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি, ১ অক্টোবর থেকেই কমিশনের কাজ শুরু হবে।’
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিগগিরই সংস্কার কমিশনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি হতে পারে। পরিপত্র জারি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কমিশনকে সাচিবিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু হবে মঙ্গলবার
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন আগামী ১ অক্টোবর, মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন আইনসচিব মো. গোলাম রব্বানী। গতকাল বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার এমপি হোস্টেলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের জন্য অফিস পরিদর্শন শেষে তিনি এই কথা জানান।
আইনসচিব বলেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। ওনারা যেখানে বসবেন, সেটা ঠিক আছে কি না তা দেখতে এসেছি।
এই সংস্কার কমিশনের জন্য জাতীয় সংসদের এমপি হোস্টেলের ১ নম্বর ব্লকের চারটি রুম ঠিক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, রুমগুলো এখনো প্রস্তুত হয়নি। তাই সংসদের সচিব ও পিডব্লিউডির ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা রুমগুলো প্রস্তুত করে দেন।
বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই পাঁচটি সংস্কার কমিশনের বিষয়ে গণপূর্ত থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে অ্যারেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে বলে আমি শুনেছি।’
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সাচিবিক দায়িত্ব কে পালন করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের যিনি সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন, তিনি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা হবেন। এটা আইন মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।