দিন দিন দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাতে ডাক্তার-নার্স এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিকে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তবে মনোবল হারাননি ডাক্তার-নার্স ও হাসপাতালের কর্মচারীরা। তারা বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব তাদের চিকিৎসার জন্য।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল গুরে দেখা গেছে, হাসপাতালগুলোর ওয়ার্ডের বারান্দা, করিডোর, সিঁড়ির নিচে কোথাও পা রাখার জায়গা নাই। সর্বত্র ডেঙ্গু রোগী। এই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ঠিকভাবে হচ্ছে না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ অন্যান্য জনবলের সংকট রয়েছে। এর মধ্যে এত ডেঙ্গু রোগীর চাপ। এমনিতে একজন রোগীর অপারেশন করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। সেখানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের সামাল দিতে গিয়ে তাদের ভাগ্যে কী ঘটছে সেদিকে লক্ষ্য রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডাক্তার-নার্সরা ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। তাদের কথা বলারও সময় নাই। তারা বলেন, আমাদের বিলম্বের কারণে একজন রোগী মৃত্যু হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে চেষ্টা করে যাব যেন কোন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা সেবা যেন ব্যহত না হয়। তবে আক্ষেপ করে ডাক্তাররা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বাসায় যেতে পারিনি। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখাও হয় নাই। এই রোগীগুলো যদি আমার মা-বাবা-ভাইবোন ও আপনজন হতো তাহলে আমি যা করতাম তাই করছি। রোগী রেখে ডাক্তার হয়ে তো বাসায় ঘুমাতে পারি না।
এদিকে রাজধানীর ছয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে দুটি সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকাকে ডেঙ্গুর রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে ৫৫টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু জ্বরের এডিস মশার সর্বাধিক বংশ বৃদ্ধি করার স্থান সনাক্ত করে তালিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে মশা নিধনে তেমন কোন কার্যক্রম স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে পড়ে না। শুধু জেল-জরিমানা কোন সমাধান নয়। ভবনের বাইরে যেখানে মশা থাকুক তা নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা বলেন, দয়া করে মশা মারুন। যেহেতু শত্রু চিহ্নিত, তাকে নিধন করা খুব সহজ। শত্রুকে নিধন না করলে সে ধ্বংস করে যাবে।
প্রসঙ্গত, ১১টি রেড জোন এলাকার মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬টি। এগুলো হলো: যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, ধানমন্ডি ও বাসাবো। উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫টি এলাকা হলো: উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, মিরপুর ও তেজগাঁও। এডিস মশা বংশ বিস্তারের ৫৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে উত্তর সিটি এলাকায় ২৭টি, দক্ষিণ সিটিতে ২৮টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১১৮৬ জন।
গতকাল বুধবার (১৬ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৯৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৬ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৬৭, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩০৯, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪৭, খুলনা বিভাগে ১০৪ জন রয়েছেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৬৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১, রংপুর বিভাগে ১৪ এবং সিলেট বিভাগে চারজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।