চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: মানব পাচারকারী যশোরের চৌগাছার তজিবর ও বজলুর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত চৌগাছার পুড়াপাড়া সংলগ্ম ভাটপাড়া গ্রামের মতিন রহমান। এলাকাবাসী এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় যশোর আদালতে একটি মামলা চলছে। এ মামলায় অভিযুক্তদের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকলেও রহস্য জনক কারনে পুলিশ তাদের ধরছে না। এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী পরিবার জানায়, মানব পাচারকারী দুই সহোদর তজিবর ও বজলুর বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার কুলিয়া গ্রামের গাজিয়ার রহমানের ছেলে। তাদের খপ্পরে পড়ে ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলা মতিন রহমান সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে।
২০২২ সালে মানব পাচার কারী তজিবার ও তার ভাই বজলু ইতালি পাঠানোর কথা বলে প্রথমে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ বাবদ নেয়। এরপর পাচারকারী তজিবার প্রথমেই তাকে লিবিয়ায় নিয়ে যায়।
সেখান থেকে আবার ইতালি পাঠানোর জন্য ফের দ্বিতীয় দফায় মতিনের কাছ থেকে খরচ বাবদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা নেয়। এরপর তজিবর লিবিয়ায় একটি মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয় অসহায় মতিন রহমানকে।
ওই চক্রটি লিবিয়ায় একটি ঘরের মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে মতিন রহমানকে আটকে রাখে।
এ সময় তারা মতিনকে একটি ঘরে আটকিয়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। সারাদিনে ১টি রুটি ও ২ লিটার পানি দিতো তাকে। এ সময় মতিনকে নির্যাতন ও মারধর করবেনা এবং মুক্তি দেবে সেই শর্তে মতিনের পরিবারের কাছে নিয়মিত ফোন করতে । তারা মুক্তিপন দাবী করে ১১ লাখ টাকা। এ টাকা না দিলে তাকে হত্যা করবে বলে ভয় দেখাতো।
তার পরিবার নিরুপায় হয়ে মতিন রহমানের জীবন বাঁচাতে সহায় সম্বল বিক্রি করে মানব পাচারকারী তজিবর (লিবিয়া প্রবাসী) ও তার ভাই কুলিয়ার বজলুর (পাচার চক্রের সদস্য) কাছে ওই ১১ লাখ টাকা দেয়। এরপর মতিন লিবিয়ার বন্দি থেকে ছাড়া পায়।
সব মিলায়ে ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয় তারা। অবশেষ লিবিয়া থেকে মতিন রহমান টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে দেশে ফিরে আসে।
আরও জানা যায়, মতিন রহমান বাড়ি থেকে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি দেয়ার পর বেশকিছুদিন তার সাথে পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না। এর ফলে ওই সময় মতিনের পরিবারের সদস্য ছকিনা খাতুন বাদী হয়ে মানব পাচারকারী তজিবর রহমান ও বজলুর রহমান সহ ৬ জনকে আসামী করে যশোর আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৬৭৬৯।
যে কারনে মানব পাচারকারী তজিবর তার পোষ্য বাহিনী দিয়ে মামলার বাদীসহ তার পরিবারের সদস্যদের মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয় । বর্তমানে মতিনের পরিবার চরম অসহায় হড়ে পড়েছে। তার স্ত্রী সংসারে অভাব অনাটনের কারনে বাপের বাড়িতে ২ সন্তান নিয়ে থাকেন। আর অসহায় মতিন সব হারিয়ে চৌগাছার সিংহঝুলী গ্রামে তার মামা বাড়িতে থাকছেন।
মতিন রহমান তজিবরের কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত পেতে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। চরম নিরাপত্তা হিনতায় ভূগছেন । আদালতের কর্তৃক মানব পাচারকারী তজিবারের ভাই বজলুর নামে ওয়ারেন্ট থাকলেও সে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তাকে রহস্যজনক কারনে ধরা হচ্ছে না বলে বাদী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মানবপাচার কারী তজিবার ও বজলুর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য চৌগাছা থানার সেকেন্ড অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত ওসি) মেহেদী হাসান কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।