প্রকৃতিতে আসি আসি করছে শীত। ঋতু বদলের এই সময়টাতে ধুলাবালি বেশি থাকায় সাধারণ মানুষের সর্দি-কাশি হচ্ছে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হচ্ছে, টনসিল ইনফেকশন, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া হচ্ছে। এছাড়া যাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে তারাও আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়টাতে গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্রই জ্বর এবং শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার পুরো পরিবারসহ জ্বর-সর্দিতে ভুগছেন। যাদের ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা আছে তাদের এ সময়টাতে সকাল-সন্ধ্যায় বাইরে বের হলে গরম কাপড় সঙ্গে রাখতে হবে। কুসুম গরম পানি পানের পরামর্শও দিয়েছেন তারা। বাড়তি সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, এ সময় জ্বর হলে অবশ্যই ডেঙ্গুর পরীক্ষা করে নিতে হবে।
রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা নাজনীন নাহর, বয়স (৭০)। তিনি হাল্কা জ্বর, গায়েব্যথা আর সর্দির সমস্যা ভুগছেন সপ্তাহখানেক ধরে। তার পরিবারে চার বছরের নাতিও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। এই বৃদ্ধা বলেন, জ্বর বেশি না থাকলেও কাশি আর গলায় খুসখুসে কাশিটা খুব ভোগাচ্ছে। শরীর ব্যথা আর গলার স্বর ভেঙে আছে চার দিন ধরে। একই অবস্থা ষাট বছরের গোলাম রব্বানীর। তিনি বলেন, খুসখুসে কাশিটা খুব বিরক্ত করছে। জ্বর নেই তেমন একটা। বেশ কদিন ধরে এই অবস্থা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শীতকালে এবং ঋতু পরিবর্তনের সময় সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বেড়ে যায়। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত গুরুতর অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে আসা রোগীর মধ্যে ১৫-২৬ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ঋতু পরিবর্তনের ফলে যে পরিবর্তন, সেটা স্বাভাবিক। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এ সময়ে সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লুর সংক্রমণ ঘটে। এছাড়া ডেঙ্গুর ব্যাপারেও সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, সিজনাল এসব অসুখ-বিসুখের ঝামেলা এড়াতে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা যত কম করা যায়, রাস্তার পাশে কিংবা খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায় ততই ভালো। বিশেষ করে বাচ্চাদের স্কুলের সামনে ঝালমুড়ি, ফুচকার মতো খাবার এবং ফুটপাতের শরবত এড়িয়ে চলতে হবে।
ইমেরিটাস এই অধ্যাপক বলেন, পুষ্টিকর নিরাপদ খাবার গ্রহণের বিষয়ে জোর দিতে হবে। বাইরে যারা কাজ করেন, শ্রমিক থেকে সবশ্রেণির মানুষ বাসা থেকে যেন পানি ফুটিয়ে নিয়ে যায়। আর ধুলাবালি ও রোগজীবাণু এড়াতে মাস্ক পরলে ভালো হয়।