রাজধানীর পল্লবীতে যথাক্রমে ৭ ও ৩ বছর বয়সী দুই ভাই রোহান এবং মুছাকে গলা কেটে হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৪০ বছর বয়সী বাবা আহাদ মিয়া। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১৬ নভেম্বরের এই ঘটনা বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে জনমনে।
আহাদ মিয়া বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন ভবনের তৃতীয় তলায় নাক কান গলা বিভাগে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক বলছেন, কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছিলেন, আহাদ মিয়া নামের ওই ব্যক্তির শ্বাসনালী কাটা পড়েছে। তার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও শঙ্কামুক্ত নয়।
এই ঘটনায় নিহত দুই শিশুর মা রোজিনা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলায় একমাত্র আসামি হচ্ছেন তার স্বামী আহাদ মিয়া।
পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহ ও অভাব অনটনসহ বিভিন্ন বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) রাতে হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের ৩০৩ নাম্বার ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় বিছানায় পুলিশ পাহারায় আহাদ মিয়ার চিকিৎসা চলছে। তার গলার কয়েক জায়গায় ব্যান্ডেজ। গলায় নিজে চুরি চালিয়ে জখম করার কারণে কথাবার্তা বলতে পারছে না। এদিক সেদিক ফেল ফেল বারবার তাকাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক দায়িত্বরত এক চিকিৎসা জানান, গতকাল (শনিবার) গলা কাটা অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা আহাদকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে তার চিকিৎসা করা হয়। তার গলায় অনেকগুলো সেলাই দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, গতকাল রাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার দুই শিশুর মা রোজিনা বাদী হয়ে আহাদ মিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে আহাদ ঋণগ্রস্ত, পাশাপাশি তার স্ত্রী রোকেয়া বিভিন্ন বাসাবাড়ি গৃহকর্মীর কাজ করে। সেটা তার স্বামী আহাদ মিয়া মেনে নিতে পারেনি। অনেকবার তার স্ত্রীকে বারণ করেছে, এইসব কাজ না করার জন্য। কিন্তু আহাদ মিয়ার এসব কথা মানেনি তার স্ত্রী রোকেয়া। এসব নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। ঋণগ্রস্ত ও সাংসারিক এসব ঝামেলা নিয়ে মানসিক অশান্তিতে ছিলেন আহাদ মিয়া। এই কারণে দুই শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে নিজেই গলায় চুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের আরও অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেই দিকটিও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। আহত আহাদ মিয়া সর্বশেষ নিরাপত্তা রক্ষীর চাকরি করতেন। এর আগে তিনি যেখন যে কাজ পেতেন পেটের দায়ে সেটেই করতেন।