মমিনুল ইসলাম, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: সব ধরনের সরকারি এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে "বাংলা ব্লকডের" সাথে সংহতি জানিয়ে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে সোয়া দুই ঘন্টাব্যপী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে চারলেনের মহাসড়কে দীর্ঘসময় ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে যানবাহনের যাত্রীরা।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা ভাস্কর্যের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল জিরো পয়েন্ট মোড়ে এসে মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না', ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’
ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ, ত্রিশাল সার্কেলের পুলিশ সুপার অরিত সরকার ও ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন।
অবরোধ চলাকালীন একপর্যায়ে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজেই তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়। পরে বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলে জানিয়ে আজকের দিনের মতো অবরোধ তুলে নেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমাদের আজকের কর্মসূচীতে এক দফা এক দাবি। সরকারি চাকরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ সবকিছুতে সকল ধরণের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে। প্রয়োজনে সংসদে আইন পাস করে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটাকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।'
ইরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌসী বিশ্বাস ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রহমিসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা বাতিল চাই।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, 'এটা আমাদের আন্দোলন নয়, এটা আমাদের দাবি। আমরা চাই এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে। আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি বৈষম্য দূর করার জন্য। আমি হাইকোর্ট এর আদেশ মানিনা। আমি নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বীদ্ধান্ত জানতে চাই। আমি একজন নারী হিসেবে চাইনা নারী কোটা থাকুক। আমার যদি যোগ্যতা থাকে আমি সেই যোগ্যতায় আমার জায়গায় ঠিকই চলে যাবো। সর্বোচ্চ কোটা ৫% করা হোক। নয়তো ছাত্র সমাজের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।'
এ বিষয়ে ২০২১-২২ সেশনের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটার বৈষম্য দূর করতে হবে এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এদিকে ভোগান্তির বিষয়ে একাধিক যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, 'যানবাহনে ঘন্টারপর ঘন্টা অপেক্ষা করা তীব্র বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক। তবে এই আন্দোলনে আমাদের দুর্ভোগ হলেও আমরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করি। চাকুরিতে বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কার করা উচিত'।