ছায়েদ আহামেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: হাতিয়া উপজেলার প্রধান ডাকঘরে গত দুই সপ্তাহ ধরে রেভিনিউ স্ট্যাম্প না থাকায় গ্রাহকের ভোগান্তি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে পোস্ট মাস্টার সামছুল হুদার বিদখুটে আচরণেও অসন্তোষ সেবা প্রত্যাশীরা।
নোয়াখালীর হাতিয়া থানা পরিষদ এলাকাস্থ প্রধান ডাকঘর থেকে প্রতিদিন সরকারি বিভিন্ন আর্থিক পাওনা পরিশোধে দরকারি এই রেভিনিউ স্ট্যাম্প না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে নানান পেশাজীবী মানুষ। এতে বেতন-ভাতা উত্তোলন কিংবা বিভিন্ন ভাউচার তৈরীতে বিঘ্ন ঘটছে দুই সপ্তাহ ধরে। শাখা পোস্ট অফিসগুলোও চালাতে পারছে না কার্যক্রম।
উপজেলার সমাজসেবা দপ্তর থেকে এককালীন চিকিৎসা সহায়তা প্রত্যাশী রাফেয়া বেগম ও হাসনা আক্তার নামের দুই নারী জানান, সমাজসেবা অফিসে দশ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগবে বিধায় আমরা পোস্ট অফিসে যাই। কিন্তু রেভিনিউ না পাওয়ায় তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে ভিতর থেকে পোস্ট মাস্টার বিদখুটে ও কর্কশ ভাষায় বলেন সরকার না দিলে আমরা কোত্থেকে দেব। পোস্ট অফিসে রেভিনিউ স্ট্যাম্প না পেয়ে তারা ভেন্ডার দোকান থেকে ১০ টাকার রেভিনিউ ১৩ টাকায় কিনতে হয়েছে বলেও জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংক থানা পরিষদ শাখার একজন স্ট্যাফ জানান, পোস্ট মাস্টার সামছুল হুদা বেশি টাকা নিয়ে কিছু কিছু ব্যক্তিকে অতিরিক্ত হারে রিভিউ স্ট্যাম্প প্রদান করেন। পোস্ট মাস্টার যথা সময়ে অফিসে না আসারও অভিযোগ রয়েছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলে ডাকঘরের পার্শ্ববর্তী সোনালী ব্যাংকে আসা বিভিন্ন গ্রাহক থেকে। তারা আরও জানায়, পোস্ট অফিসে কোনো চিঠি রেজিষ্ট্রি করলে সাথে প্রাপ্তিস্বীকার(এডি)'র জন্যও খরচ কাটে। কিন্তু এডি সরকারিভাবে না দিয়ে তারা গ্রাহকদের দ্বারা সামনের দোকান থেকে ১০টাকা খরচ করিয়ে ফটোকপি করিয়ে থাকেন।
এদিকে, হাতিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি কৃষ্ণ মজুমদার জানান, কিছুদিন আগে তিনি তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ডাক ঘরে এসে সকাল ১০ টার পরও কাউকে পাননি।
এসব বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা ডাক অফিসের পোস্ট মাস্টার সামছুল হুদার থেকে জানতে চাইলে তিনি তার ভাগিনা টিভির বড় সাংবাদিক, প্রধানমন্ত্রীর পিএ তার কাছের লোক ইত্যাদি অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে থাকেন। এবং সরকার রেভিনিউর দাম বাড়াবে বলে রাজস্ব বিভাগ রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন বলেও জানান।
নোয়াখালী জেলা ডেপুটি পোষ্টমাষ্টার জেনারেল শংকর কুমার চক্রবর্তী জানান, যেই কাগজে রেভিনিউ স্ট্যাম্প ছাপানো হয় তা বিদেশ থেকে আসে। ফলে এই পেপার্স সমূহ আসতে মাঝে মধ্যে সমস্যা হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করতেও অনেকসময় বিলম্ব ঘটে। এক্ষেত্রে সিকিউরিটি প্রিন্টিং সমস্যার কথাও বলেন তিনি।
এ উপজেলাটি চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন হওয়ায় চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চল পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. ছালেহ আহাম্মদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রেভিনিউ স্ট্যাম্প সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেপারস সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ে সমস্যা হওয়ায় এগুলো সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে এবং তা একসপ্তাহের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। হাতিয়া উপজেলা পোস্ট মাস্টারের অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান এই কর্মকর্তা।