মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মিরসরাই উপজেলা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। অনেকেই চলে গেছেন আত্মগোপনে। থাকছেন না বাসাবাড়িতে। বন্ধ করে রেখেছেন মোবাইল ফোন। যে যেভাবে পারছেন, কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে গ্রেফতার এড়ানোই এখন তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে ৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মিরসরাই উপজেলায় বড় ধরনের ঘটনা না ঘটলেও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে। দুইটি মামলায় এরই মধ্যে ৪৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। অনেকের বাসাবাড়িতে রাতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। তাই পারতপক্ষে বাড়িঘরে যাচ্ছেন না তারা।
যদিও বিএনপি নেতারা দাবি করে আসছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না। এরপরও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির দাবি, সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে বিএনপিকে ঘায়েল করতে চাইছে। এ কারণে অতীতের মতো নিরীহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে পুলিশ আবারো নেমেছে মাঠে।
মিরসরাই থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই রাত ৯ টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নয়দুয়ারিয়া এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের নেতকর্মীরা মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানাকে ধাওয়া করে। এসময় রানা পালিয়ে গেলেও তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় মাসুদ করিম রানা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং ১৫০ জন অজ্ঞাত আসামি দিয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
জোরারগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই দুপুরে কারফিউ চলাকালীন দুই ঘণ্টা শিথিলের সময় বারইয়ারহাট পৌর বাজারে একটি গাড়ি ভাংচুর করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় রিয়াজ হোসেন নামে একজন কাটাছরা যুবদলের সাবেক আহবায়ক জসীম উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন অভিযোগ করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মিরসরাইয়ে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তারপরও সরকারি দলের মদদে পুলিশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। ইতোমধ্যে অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। শত শত নেতাকর্মী ঘরে থাকতে পারছে না।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, পুলিশ অন্যায়ভাবে নিরীহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া রয়েছে। আগে থেকেই মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা। কারো কারো মামলার সংখ্যা অর্ধশত। আদালতে হাজিরা দিতে দিতে জীবন পার করছে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) দীপ্তেশ রায় জানান, গত ২০ জুলাই রাতে উপজেলার নয়দুয়ারিয়া এলাকায় মোটরসাইকেল পোড়ানোর মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত দেড়শ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। সে মামলায় ইতিমধ্যে ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাশকতার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন জানান, গত ২০ জুলাই দুপুরে বারইয়ারহাটে একটি গাড়ি ভাংচুর করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।