ঢাকা
১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৪৮
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ১০, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ১০, ২০২৪

বন্দরের পণ্যবাহী ট্রাকে সদরঘাট থানার ক্যাশিয়ার মিন্টু চাঁদার খড়গ

এস এম আকাশ, ব্যুরো প্রধান,চট্টগ্রাম: তিনি পুলিশের কেউ নন,থানায় তাঁর কোন কাজও নেই। তারপরও তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপির) সদরঘাট থানায় জায়গা করে নিয়েছেন। নিজেকে কখনো পুলিশ,কখনো থানার ক্যাশিয়ার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্পটে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। তাঁর ব্যবহ্নত তিনটি মোবাইল সিমে কল দিলে থ্র কলে ‘ক্যাশিয়ার মিন্টু সদরঘাট থানা’,‘কালেক্টর সদরঘাট থানা’এমন নাম মোবাইল স্কিনে ভেসে উঠছে। অভিযোগ উঠেছে, মিন্টু প্রকাশ ক্যাশিয়ার মিন্টুর ইশারায় নাকি সদরঘাট থানার পুলিশ ওঠাবসা করেন। 

গত ৮ বছর ধরে সদরঘাট থানার নামে চাঁদাবাজি করে গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়, ৫ তলা বাড়ি, গাড়ি ও অসংখ্য দোকানপাট। নগরের মাঝিরঘাট বাংলাবাজারে সুফিয়া এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চালিয়ে যাচ্ছেন চাঁদাবাজির রমরমা ব্যবসা। চট্টগ্রাম বন্দরের আসা পণ্যবাহী জাহাজ থেকে লোড ও আনলোড করা ট্রাক থেকে থানার ক্যাশিয়ার পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে গড়ে তোলেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ও সম্পদ। 

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা মিন্টু গত ১৫ বছর আগে নগরের মাঝিরঘাট এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাহাদুরের ছত্রছায়ায় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে যান সদরঘাট থানার ক্যাশিয়ার মইনুদ্দিনের সহকারি। দুই বছর না যেতেই মইনুদ্দিনকে কৌশলে আউট করে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পান মিন্টু।  এছাড়া সে আনু মাঝিরঘাট এলাকার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই অর্ণব বড়ুয়ার স্বঘোষিত ক্যাশিয়ারের কাজ করেন। দীর্ঘদিন থাকার কারণে থানায় ওসি বা ফাঁড়ির দায়িত্বে যেই আসুক তিনি নিজেকে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর থানার ক্যাশিয়ার পরিচয়ে আনু মাঝিরঘাট, নবী দোভাষ ঘাট, বাংলাবাজার ঘাটসহ কর্ণফুলী নদীর ১৭টি ঘাটের জাহাজ থেকে লোড-আনলোড করা পণ্যবাহী ট্রাক, মাদকের স্পট, জুয়ার আসর ও বিভিন্ন অবৈধ স্পট থেকে আদায় করেন মাসোহারা। কোনো স্পট থেকে থানা ও আনু মিয়া মাঝির ঘাট পুলিশ ফাঁড়ির নামে ১০ হাজার টাকা নিলে ক্যাশিয়ার মিন্টু নিজের নামে নেন ৫ হাজার টাকা মাসোহারা। এভাবে থানা এলাকার বিভিন্ন স্পট থেকে প্রতিমাসে তিনি আদায় করেন ১৫ লাখ টাকা চাঁদা।

আনু মিয়া মাঝির ঘাটে পণ্য লোড করতে আসা এক ট্রাক চালক জানান, এসআই অর্ণব বড়ুয়ার ও থানার ক্যাশিয়ার মিন্টু পুলিশ বক্সটিকে চাঁদা আদায়ের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। বক্সের পাশে আনুমিয়া মাঝির ঘাটে পণ্য লোড করতে আসা প্রতি ট্রাক থেকে দৈনিক হাজার দেড় হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। তাঁরা জানান, প্রতিদিন ওই ঘাটে প্রায় শতাধিক ট্রাক পণ্য লোড করতে আসে। 

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আনুমাঝিরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ অর্ণব বড়ুয়া বলেন,আমরা কোন ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করিনা। তবে পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এ পুলিশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিউজ না করার অনুরোধ করেন। 

বাংলাবাজার ঘাটে পণ্য নিতে আসা ট্রাক চালক রফিক উদ্দিন বলেন, সদরঘাট থানার ক্যাশিয়ার মিন্টুকে প্রতি ট্রাক থেকে ১ হাজার টাকা করে দিতে হয়। তিনি না থাকলে মাঝিরঘাট বাংলাবাজারের ফকিরের দোকানের নাছির চাঁদা নিয়ে যায়। নগরের সদরঘাট এলাকায় প্রতিদিন কয়েক শত ট্রাক বন্দরের পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করে গন্তব্যে নিয়ে যায়।

সদরঘাট এলাকায় চলাচল করে শত শত তেলবাহী ট্রাকলরী। ওই এলাকায় নৌ থানা নামে একটি থানাও রয়েছে। তবে সদরঘাট থানার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সদরঘাট থানার ক্যাশিয়ার মিন্টু বিগত দিনে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ এবং থানার প্রভাব খাটিয়ে দেদারছে চাঁদাবাজি করে গেছেন। তিনি নিজেকে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর হাতে আটক এমপি লতিফের লোক পরিচয় দিয়ে দাপটের সাথে চলতো।

সদরঘাট থানা এলাকায় বিভিন্ন দোকান থেকে দৈনিক ভিত্তিতে আদায় করেন ৫০ টাকা করে চাঁদা। মাদকের স্পট, জুয়ার আসরসহ বিভিন্ন অবৈধ স্পট থেকে থানার মাসোহারার নামে তিনি আদায় করেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া নিজের নামেও আলাদাভাবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ,মিন্টু সদরঘাট থানার স্বঘোষিত ক্যাশিয়ার। দীর্ঘদিন থাকার কারণে থানায় ওসির দায়িত্বে যেই আসুক তিনি নিজেকে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর থানার ক্যাশিয়ার পরিচয়ে মাদকের স্পট, জুয়ার আসর ও বিভিন্ন অবৈধ স্পট থেকে আদায় করেন মাসোহারা। 

আহমদ নবী নামের বাংলাবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ক্যাশিয়ার মিন্টুর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ এলাকার ব্যবসায়ীরা। তিনি যখন-তখন বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে কাস্টমারদের হয়রানি করেন। নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দাবি করেন চাঁদা। বলেন, এখানে ব্যবসা করতে গেলে থানায় কোটা (মাসোহারা) দিতে হবে। তা না হলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে বলেও হুমকি দেন।

মাঝিরঘাট বাংলাবাজারে সুফিয়া এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠান খুলে মিন্টু পুরো থানা এলাকা শাসন করছেন। সেখানে সদরঘাট থানার বিভিন্ন এসআই, কনস্টেবলসহ সারাদিন আড্ডা দেয়। রাতে চলে মাদক ও দেহ ব্যবসায়ীদের আড্ডা। তাকে কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাঁর ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার সুফিয়া এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায় কিছু উঠতি যুবক বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করার জন্য মিন্টুর ব্যবহ্নত তিনটি মোবাইল সিমে ফোন করা হলে থ্র কলে নিজের নাম সদরঘাট থানার ক্যাশিয়ার মিন্টু স্কিনে ভেসে আসে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি থানার ক্যাশিয়ার হিসেবে আছি। তবে চাঁদাবাজিতে জড়িত নই। চাঁদাবাজির টাকায় বোয়ালখালীতে ৫তলা বাড়ি, মাঝিরঘাটে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং একাধিক সম্পদের বিষয়ে তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে সেগুলোর মালিক। 

এব্যাপারে সিএমপির সদরঘাট থানার ওসি ফেরদৌসকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram