মাজহারুল ইসলাম রানা, নগর প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং পরবর্তীকালে সরকার পতনের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখনো যাঁরা হাসপাতালে আছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ইউনিট তৈরি করে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই।
তাঁদের পরিবারগুলো বলছে, অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যের ওষুধের বন্দোবস্ত হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ব্যয় হচ্ছে। একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনেকেই গুরুতর আহত। তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দরকার।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আন্দোলনের সব ডকুমেন্টেশন অর্থাৎ দলিল রচনা করা হচ্ছে, এগুলো আর্কাইভ করা হবে। পুরো আন্দোলনকে আর্কাইভ করা হবে।’
রোববার (১৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওমর ফারুক সহ আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, ফারুক-ই-আজম হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন। ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘আমি আহতদের চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। আহতরা সবাই চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট এবং ধীরে ধীরে তাদের অবস্থা উন্নতি হচ্ছে। আশা করছি, তারা সবাই সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
আহত-নিহতদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেগুলো পরবর্তীতে আমাদের ধীরে ধীরে করতে হবে। আগে আহতরা চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে উঠুক। যারা নিহত হয়েছেন আমরা তাদের যথাযথ মর্যাদায় দেখি। একটু সময় ধরতে হবে।স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনারা দেশ স্বাধীন করেছেন, এখন যারা নতুন স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে তাদের বিষয়ে কি বলবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে একই রক্তের ধারাবাহিকতা। কথায় আছে না ‘বীরের রক্ত পরাভব (হার) মানে না’। ৫০ বছর পরে ওই একই রক্তধারা এখানে এসে মিশেছে।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তাসলীম উদ্দিন, চট্টগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ও মো. রাসেল মাহমুদ।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ দর্জিপাড়া এলাকায় আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত কিশোর ইশমামুল হকের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি নিহতের কবর জিয়ারত করেন। পরে ইশমামুলের মা শাহেদা বেগম, বড় ভাই মুহিবুল হক, ছোট ভাই আবু বক্কর এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি নিহতদের পরিবারের দায়িত্ব সরকার নেবে বলেও জানান তিনি। ১২টার দিকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা ভবন ও ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা পরিষদ ভবন পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা দ্রুত সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।
ফারুক-ই-আজম পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, বিগত স্বৈরশাসক পুলিশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। এখন অনেক জায়গায় জনগণ পুলিশকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকুক। সবাইকে নিয়ে আমরা একটি বৈষম্যহীন সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
উপদেষ্টা বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পোপাদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর আকুবদন্ডী ওয়ার্ড সৌদি প্রবাসী মো. নুরুল আবছারের ছেলে আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মো. ওমরের বাড়িতে যান। তার কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।