হুমায়ুন কবীর রিন্টু, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাসসহ ১১ জনকে ৫ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে যশোর স্পেশাল জজ আদালত। তৎকালীন নড়াইল পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, কমিশনার ও ইঞ্জিনিয়ারসহ ১১ জনকে এই দন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
নড়াইল পৌরসভার রূপগঞ্জ হাট ইজারা দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক এ দন্ডাদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- নড়াইল পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর খন্দকার আল মনসুর বিল্লাহ, কাউন্সিলর আহম্মদ আলী খান, কাউন্সিলর তেলায়েত হোসেন বাবু, ইজারাদার রফিকুল ইসলাম, ইজারাদার রাধে কুন্ডু, ইজাজুল হাসান বাবু, ইজারাদার জিল্লুর রহমান, হাট ইজারাদার এইচএম সোহেল রানা, তৎকালীন পৌর সচিব শফিকুল আলম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী ওয়াজিউর রহমান।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে নীতিমালা ২০০২-এর ৩(ঘ) অনুচ্ছেদ ভঙ্গ করে আসামিরা ১৪১২ বঙ্গাব্দের হাটবাজার ইজারা দেন। আসামিরা নড়াইল পৌরসভার রূপগঞ্জ সাধারণ হাট ও নড়াইল বাস টার্মিনাল ১৪১২ বঙ্গাব্দে ইজারা দিয়ে ৭ লাখ ৮১ হাজার ২০ টাকা আদায় করেন এবং ১৪১১ বঙ্গাব্দে একই হাট ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা আদায় করেন। সর্বমোট ১২ লাখ ২হাজার ২৮০ টাকা পৌরসভায় জমা না দিয়ে তারা তা আত্মসাৎ করেন।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, ইঞ্জিনিয়ার সচিবসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের বিরূদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক প্রত্যেককে ৫ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস করে সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন।
একই সঙ্গে আত্মসাৎকৃত ১২ লাখ ২২৮০ টাকার মধ্যে আসামি জিল্লুর রহমান ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০ টাকা, সোহেল রানা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১২০ টাকা, রাধে কুন্ডু ৩ লাখ ৫০ হাজার, রকিবুল ইসলাম ১ লাখ ৮৫ হাজার, ইজাজুল হাসান ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯শ টাকা পরিশোধ করবেন।
সাজাপ্রাপ্ত এজাজুল হাসান, জিল্লুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম বাদে সকলেই আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তাদের সকলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাসসহ ৮ জনের ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬শ ৬৫ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড হয়।
২০১৭ সালে দুদকের মামলায় রায় ঘোষণার কয়েক দিন পর ওই বছরের ২ অক্টোবর যশোর স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হলে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর সোহরাব হোসেন বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। পরে ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে স্বপদে বহাল হন তিনি। এরপর থেকে তারা জামিনে ছিলেন।