ঢাকা
১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:৩৮
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ২৮, ২০২৪

বন্যার্তদের জীবন বাঁচাতে চট্টগ্রামের সাহসী ছাত্র ও সহপাঠীদের "রেসকিউ ও ত্রাণ বিতরণ"

এস এম আকাশ, ব্যুরো প্রধান, চট্টগ্রাম: ভারী বর্ষণে নদীর পানি ফুলে প্লাবিত হয়েছে দেশের প্রায় ১১টি জেলা সাথে পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। কাটার উপর লবনের ছিটার মতো বিনা নোটিশে গত ২১ আগষ্ট ভারত থেকে উজানের পানি নেমে এলে নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিণত হয় সমুদ্রে। মাথা সমান পানিতে তলিয়ে যায় লাখ লাখ ঘর বাড়ি ও ফসলী জমি খামার এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।

বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের পাশে সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন। সাধারণ মানুষের মানবেতর পরিস্থিতির খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানবতার ডাকে দলে দলে সাধারণ মানুষ ও তরুণ যুবকেরা বন্যাদুর্গত এলাকায় রওনা দিতে থাকে মানুষকে বাঁচানোর তাগিদে। তারই ধারাবাহিকতায় চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে চট্টগ্রামের প্রাণচঞ্চল ও দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন যুবক তাদের সহপাঠী ও বন্ধুরা মিলে বন্যার্তদের পাশে ত্রাণ ও রেসকিউ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

দেশের চরম মুহূর্ত্বে যেভাবে ছাত্রজনতা দীর্ঘদিনের বৈষম্য দুর করতে দেশ সংস্কারে নেমেছে ঠিক তেমনই দেশের কঠিন সময়ে জীবন ঝুঁকি নিয়ে স্বপ্রনোদিত হয়ে মানুষের জন্য যে মানুষ তা চেতনায় ধারণ করে চট্টগ্রাম থেকে গিয়ে বানভাসি মানুষকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচিয়ে ও ত্রাণ সহায়তার নিপুণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে তরুণ সংগঠক আনিস মোহাম্মদ বিবলু বলেন, আমি আমার পিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি কেননা আমার বাবা জনাব নুর মোহাম্মদ রানা একজন অত্যন্ত মানবিক ও সমাজকর্মী মানুষ। পেশায় চট্টগ্রামের সিনিয়র প্রবীণ সাংবাদিক যিনি দেশের স্বনামধন্য ও জাতীয় দৈনিক সময়ের কাগজ এর সহ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যিনি তাঁর জীবনে মানুষের জন্য ও দেশের যে কোন দুর্যোগে নানান সহযোগিতায় ঝাপিয়ে পড়েছেন যা সন্তান হিসেবে আমিও তার ধারাবাহিকতা ও শিক্ষা নিজ হৃদে ধারণ করে এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাই।

ঐ দিন গুলোর অর্জন বর্ণনা করতে গিয়ে আনিস মোহাম্মদ বিবলু বলেন, আমরা সকল সহপাঠীরা যৌথ আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ হই ২১ আগষ্ট আমরা ত্রাণ ও বোট সংগ্রহ করে পরের দিন ২২ আগষ্ট সকালে বোট আর ট্রাক নিয়ে কয়েকশত মানুষের জন্য ত্রাণ ও রেসকিউর জন্য যা যা সরঞ্জাম দরকার তা সব নিয়ে ফেনী জেলার মহুরীগঞ্জ নেমেই আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধার কাজ শুরু করি। আটকা পড়া মানুষ গুলোর অবস্থা এত ভয়াবহ ছিল যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। ওখানে মানুষের বাঁচার আকুতি কান্না দেখে আমাদের মন ভারী হয়ে যায়। স্থানীয় মানুষরা সবার কাছে অনুরোধ করতেছে ওদের আত্মীয়-স্বজনকে উদ্ধার করার জন্য এবং আমরা সহপাঠীরা দুইটা বোট নিয়ে উদ্ধার কাজে নেমে যাই। পরে আমরা বোটে করে ত্রাণ গুলো নিয়ে বিতরণ করতে থাকি এবং ঘন্টার পর ঘন্টা শত মানুষকে উদ্ধার করতে থাকি এবং যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আছে তাদেরকে শুকনো খাবার দেয়া শুরু করি। এভাবে আমাদের উদ্ধারকাজ চলতে থাকে ধারাবাহিক ভাবে। ফেনী জেলার গহীন গ্রামের অনেক ভিতরে ক্রমাগত এগিয়ে যেতে থাকি তার মধ্যে ফাজিলপুর, মুহুরী বাজার, পুর্ব মন্দিয়া, দক্ষিণ মন্দিয়া, উত্তর কুমার, দক্ষিণ কুমার, কৈয়রা, শিবপুর, নিচ পানুয়া, ছাগলনাইয়া, ঘোপাল, ফুলগাজী, পরশুরাম, সিলনিয়া এলাকা সহ জেলার যেখানেই মানুষ আটকা পড়ে আছে খবর পেয়েছি সেখানেই তাদেরকে উদ্ধার করি।

কিছু কিন্তু এলাকায় আটকা পড়ে আছে যারা বাঁচার জন্য ঘরের টিনের ছালের উপর আশ্রয় নিয়েছেন তাদেরকে ও উদ্ধার করি। বিভিন্ন এলাকায় মানুষদেরকে বিশুদ্ধ পানি শুকনা খাবার পৌঁছে দিয়েছি, অনেক বলছেন তিন দিন ধরে কোন বোট নৌকা তাদের কাছে খাবার নিয়ে আসে নাই, খুবই মানবেতর জীবনযাপন দেখে আমাদের বুকটা ভারী হয়ে উঠে। আমরা ৫০০ লিটার উপরে পানি বিতরণ করি। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামে উদ্ধার করার সময় কয়েকটা মৃত লাশও উদ্ধার করি এবং শুকনো অনেক জায়গায় খুঁজাখুঁজির পরে সব জায়গায় পানি আর পানি তাদেরকে কবর দেওয়ার মতন কোন জায়গা ছিল না, অনেক ঘুরাঘুরির পরে একটা উপরে স্থান পাই,সেখানে তাদেরকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমারা প্রায় চারদিন যাবৎ ত্রান বিতরন ও সহায়তা করি এবং আগামী দুই চারদিন পর আবারও বন্যার্তেদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহনের ব্যবস্থা করছি।

আমাদের এই টিমে সার্বিক সহযোগিতা ও মানবিক কর্মযজ্ঞের স্বাক্ষী হিসেবে সাহসী নেতৃত্ব রয়েছেন মোহাম্মদ জাহিদ, শাকিল, আমি আনিস মোহাম্মদ বিবলু, তৌহিদুল ইসলাম ফরহাদ, মিনহাজুল হক মিনার, এহসান মনির, তানভীর আহমেদ, মুতাজ সিকদার, মাহফুজ মুন্না ও ইমাম সাকিব।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram