পরিতোষ দাস, মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: নেত্রকোনার মদন উপজেলা হাসপাতালে জ্বালানি তেল সংকটের কারণে অ্যাম্বুলেন্স সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গত এক মাসের অধিক সময় ধরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকায় হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগীকে দূরবর্তী কোনো হাসপাতালে নিতে পারছেন না রোগীর স্বজনরা। এদিকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রায় তিনগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে তাদের। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গরিব ও দুস্থ রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্সে জ্বালানি হিসেবে অকটেন তেল ব্যবহার করা হয়। গত অর্থ বছরে মোনাকো ইন্টারন্যশনাল লিমিটেড তেল পাম্পকে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। তেলের পাম্পে বকেয়া হওয়ায় পাম্প কর্তৃপক্ষ জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ১০ টাকা। মদন থেকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের ভাড়া ৬০০ টাকা ও মদন থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাড়া ১৪৬০ টাকা। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মদন থেকে নেত্রকোনার ভাড়া ১৮শ থেকে ২ হাজার, মদন থেকে ময়মনসিংহের ভাড়া ৩হাজার ৫শ থেকে ৪ হাজার টাকা।
হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। রোগীদের স্বজনেরা হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে ভাড়ার জন্য যোগাযোগ করলে অ্যাম্বুলেন্স চালক তাদের জ্বালানি তেলের বরাদ্দ শেষ হওয়ায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকার কথা বলে। এ কারণে প্রায় তিনগুণ ভাড়া দিয়ে অন্যত্র যেতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসায় রোগীদের বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে।
উপজেলার ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাইকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। চিকিৎসকেরা ভাইকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রেফার করেছিলেন। হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে যোগাযোগ করি। তারা ৪ হাজারের কমে ময়মনসিংহ যাবে না। পরে সাড়ে ৩ হাজার ৫শ টাকায় নেত্রকোনা থেকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স এসে ময়মনসিংহ নিয়ে যায়।
উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে ময়মনসিংহ নিয়ে গেছি। এতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ে ২১০০ টাকা ভাড়া বেশি লেগেছে। তেলের কারণে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকবে এমনটা মেনে নেওয়া যায় না।
জানতে চাইলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের চালক খোকন মিয়া বলেন, পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ তেল না দেয়ায় অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ নূরুল হুদা জানান, গত অর্থ বছরে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়ে পাম্পের বকেয়া পরিশোধ করেছি। বর্তমানে আবার ১৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ১শ ২৮টাকা বকেয়া হয়েছে। মেনাকো ইন্টারন্যশনাল লিঃ ০২/০৮/২০২৪ তারিখ চিঠি দিয়ে ঐদিন থেকেই তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলে আবারও অ্যাম্বুলেন্স সেবা সচল হবে।
মেনাকো ইন্টারন্যশনাল লিঃ এর ম্যানেজার মোঃ মহিউদ্দিন জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূরুল হুদা স্যারের সাথে বারবার মোবাইলে যোগাযোগ করলে উনি ফোন রিসিভ করেন না। ১৩ লক্ষ টাকার উপরে বকেয়া থাকায় মালিকের নির্দেশে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ অনুপম ভট্টাচার্য্য জানান, পাম্পে তেলের টাকা বকেয়া থাকার দরুন অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে ইউএইচএফপিও কে এ বর্তমান পরিস্থিতিতে পাম্পের মালিক যেন তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখে সে জন্য ইউএনওর সাথে আলোচনা করে তাকে নিয়ে পাম্প কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করার জন্য বলেছি।