ঢাকা
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:৫৭
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪

বিএসএফ এর নির্মমতার বলি স্বর্ণার পরিবারে থামছে না কান্না

সাইফুল ইসলাম সুমন, জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: স্কুল ছাত্রী স্বর্ণার মর্মান্তিক মৃত্যুতে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রাম এখন শোকেস্তব্ধ। শান্ত এই জনপদ শোকে আরো কাতর হয়ে গেছে। এই গ্রামেরই কিশোরী প্রাণচঞ্চল স্বর্ণা দাস চলে গেছে পরপারে। সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে বিএসএফ এর বুলেটের আঘাতে প্রাণ গেছে স্বর্ণার। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ এর নির্মমতার বলি স্বর্ণার পরিবারে থামছে না কান্না। বাবা পরেন্দ্র দাস ও মা সঞ্জিতা রানী দাস বার-বার মুর্ছা যাচ্ছেন। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে স্বর্ণা ছিলো সবার ছোট। পড়ালেখায় ছিলো মেধাবী। পুরো স্কুল মাতিয়ে রাখতো। সহপাঠিরা অকালে স্বর্ণাকে হারানোর শোকে মুহ্যমান।

নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী স্বর্ণা মায়ের সাথে গত ১ সেপ্টেম্বর রোববার রাতে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কুলাউড়ার শরিফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত দিয়ে ভারত যেতে চেয়েছিলো। ত্রিপুরা রাজ্যের শনিচড়া গ্রামে তার মামার বাড়ি। স্বর্ণার এক ভাই মামা কার্তিক দাসের পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন থেকে আছে। ভাইকে দেখা ও মামার বাড়ি বেড়ানো অধরাই রয়ে গেলো স্বর্ণার। স্বর্ণা দাসের বাবা পরেন্দ্র দাস বলেন, রোববার সকালে মা ও মেয়ে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। সোমবার সকালে স্বর্ণার মামার বাড়িতে যোগাযোগ করে জানতে পারি তারা যায়নি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক সেনা কর্মকর্তার সহযোগিতায় শমশেরনগর থেকে স্বর্ণার মাকে উদ্ধার করি। পরে সোমবার বিকেলে বিজিবির মাধ্যমে আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। স্বর্ণার মা সঞ্জিতা রানী দাস বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমি ও আমার মেয়ে দালালদের খপ্পরে পড়ে যাই। সাথে চট্রগ্রামের আরো একটি পরিবার ছিলো তারাও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সীমান্তের কাছে যাওয়া মাত্রই হঠাৎ গুলির আওয়াজ শুনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। নির্দয় বিএসএফ এর গুলিতে আমার মেয়ের শরীর ঝাঁজরা হয়ে গেছে। এ কথা বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সঞ্জিতা রানী দাস।

স্বর্ণার ভাই পিন্টু দাস তার মায়ের মুখ থেকে শুনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, হঠাৎ বিএসএফকে স্বর্ণা কাটাতারের পাশে দেখে আতঙ্কিত হয়ে বলে ‘আমাদের মেরো না আইনের আশ্রয়ে নিয়ে যান’। কোন কথা না শুনে বিএসএফ যখন একেবারে কাছে থেকে বন্দুক তাক করে, তখন স্বর্ণা দেখে ঘুরে যায়। তখন পেছন দিকে বিএসএফ গুলি করলে গুলি ঢুকে বুকের ডানপাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। তখনই স্বর্ণা বলে, মা হাতটা ছেড়ে দাও, আমি আর বাঁচবো না। তোমার প্রাণ রক্ষা করো। পিন্টু দাস আরও জানান, ওই সময় চট্টগ্রামের একটি পরিবারের সঙ্গে আমার মা ও বোনকে দালালরা ভারতে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করে। নির্দয় বিএসএফের গুলিতে আমার বোনের শরীর ঝাঁজরা হয়ে গেছে।

স্বর্ণার সহপাঠি সুস্মিতা দাস, বর্না বিশ্বাস, মারিয়া জান্নাত, হুমাইরা আক্তার ও ইশরাত জাহান নুরা জানায়, পড়ালেখায় স্বর্ণা ভালো ছিল। খেলাধুলাও আমাদের সাথে করতো। সুন্দর কথাবার্তায় পুরো ক্লাস মাতিয়ে রাখতো। বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে ভাবতে কষ্ট হয়। এই বাহিনী এত নির্মম কেন। গুলি করতে তাদের বুক একবারও কাঁপলো না। ওদের কি স্বর্ণার মতো কোন সন্তান নেই। আমরা স্বর্ণ হত্যার বিচার চাই।

নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি দাশ জানান, ‘স্বর্ণা খুবই মেধাবী ছিল। পড়ালেখা, ছবি আঁকায় সবদিক দিয়ে সে ভালো ছিল। বিদ্যালয়ে খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সে জড়িত থাকত।’ তার মৃত্যুতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা শোকসন্তপ্ত পরিবারে প্রতি সমবেদনা জানাই। এ শোকে সান্ত্বনা জানানোর ভাষা নেই।

স্কুল শিক্ষক দিবাকর দাস ও তপন কান্তি দাস জানান, স্বর্ণা লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিল মেধাবী। সে ছিল বহুমুখী প্রতিবার অধিকারী। তার সহপাঠী, শিক্ষকসহ এলাকাবাসি এ মৃত্যু কোন ভাবে মেনে নিতে পরছেননা। আমরা এ হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচারের দাবীসহ সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের জোরদাবী করছি।

স্থানীয় পশ্চিম জুড়ী ইউপির ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মদন মোহন দাস বলেন, মেয়েটি বড় নম্র ভদ্র ছিলো। পুরো গ্রামেই তার সুনাম ছিলো। তার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।

পশ্চিশ জুড়ী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, গুলি করে মারার অধিকার কে দিলো। আমরা সীমান্তে গুলি করে মারাকে সমর্থন করি না। আর কত ফেলানির মতো লাশ সীমান্তে পড়বে। ভারত যদি আমাদের বন্ধু ভাবে তাহলে এসব বন্ধ করতে হবে। স্বর্ণার মৃত্যুর ৪৫ ঘন্টা পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে স্বর্ণার লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ। পরদিন বুধবার তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে বিএসএফের গুলিতে স্বর্ণা দাস নামের ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে একটি প্রতিবাদ নোট পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো ওই প্রতিবাদ নোটে এ ধরনের নির্মম কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারকে জানিয়েছে, সীমান্ত হত্যার এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অযৌক্তিক। পাশাপাশি এ ধরনের পদক্ষেপ সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, ১৯৭৫ এর বিধান লঙ্ঘন করে। প্রতিবাদ নোটে ভারত সরকারকে এ ধরনের জঘন্য কাজের পুনরাবৃত্তি বন্ধের পাশাপাশি সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পরিচালনাসহ ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram