গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: দেখতে দেখতে পূজা শেষ। দশমীতে মা দুর্গার বিদায়ের পালা। মর্তলোক ছেড়ে দশভুজা দেবী দুর্গার বিদায় দশমীর দিনেই হয়ে থাকে। তবে এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। একই দিনে দুই লগ্ন। শনিবার সকালে নবমী তিথির লগ্ন শেষ হয়ে শুরু হয় বিজয়া দশমীর লগ্ন। তাই শারদীয় দুর্গোৎসবের চারদিনের উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় তিনদিনেই। এখন মন্ডপে মন্ডপে বিষাদের সুর। এই বিষাদের মধ্যে স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনায় সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের নারীরা। সকাল থেকে মন্ডপে মন্ডপে এ দৃশ্য দেখা যায়।
রবিবার সকাল থেকে শঙ্খধ্বনি ঢাক-কাসরের সুর আর পুরোহিত ভক্তদের পূজা অর্চনার মধ্যদিয়ে গৌরীপুরের মন্ডপে মন্ডপে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। মন্ডপগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে দশমী বিহিত পূজা। এরপরই দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গার বিদায়ের প্রহর শুরু হয়েছে।
রবিবার গৌরীপুরের কালীখলা, দুর্গা মন্দির, মধ্যবাজার, মাঝিপাড়া, বাগান বাড়ি, ঝলক মৎস্য খামার উত্তর বাজার, চকপাড়া, রাইছমিল, পূর্বদাপুনিয়া, পাল মন্দিরসহ পূজামন্ডপে গিয়ে দেখা যায়, নারীরা নেচে-গেয়ে সিঁদুর খেলায় মেতেছেন। বিবাহিত নারীরা অঞ্জলী শেষে দেবী দুর্গার মতো স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় একে অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন।
দশমী মানেই উমার ঘরে ফেরার পালা আর বাঙালির চোখে জল। দুর্গাপুজো তো তার কাছে শুধু উৎসব নয়, আবেগের আর এক নাম। আবার অপেক্ষা এক বছরের।দশমীর দিন সিঁদুর খেলা রীতির জন্য বাঙালি নারী অপেক্ষায় থাকে। সিঁদুর ব্রহ্মার প্রতীক। ব্রহ্মা জীবনের সমস্ত কষ্ট দূর করে আনন্দে ভরে রাখেন বলেই হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয়, সিঁথিতে সিঁদুর পরলে কপালে ব্রহ্মা অধিষ্ঠান করেন। এই কারণে দশমীর দিন সিঁদুর খেলার এই প্রচলন বলে মনে করেন অনেকে। একে সৌভাগ্যের প্রতীক বলেও মনে করা হয়।
গীতা অনুসারে কাত্যায়নী ব্রত উপলক্ষে কৃষ্ণের মঙ্গল কামনা করে গোপিনীদের সিঁদুর খেলার উল্লেখ পাওয়া যায়। দশমীতে ঢাকের বাদ্যি, উলুধ্বনি আর সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে বাঙালি নারীরা। দশমীর দিন বিবাহিত মহিলারা আগে দেবীকে বরণ করেন। তাঁর কপালে সিঁদুর ছুঁইয়ে, সেই সিঁদুর একে অন্যের সিঁথিতে দেন। মনে করা হয় এটি সৌভাগ্যের প্রতীক। শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টিমুখে শেষ হয় উৎসব। এই কারণে দশমীর দিন সিঁদুর খেলার প্রচলন।