গোলাম মাহবুব, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ষড়(ছয়) ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ছয়টি ঋতুই প্রকৃতিতে যেন ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে আসে। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে শরৎ ঋতু বা শরৎকাল। ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস শরৎ কাল বা শরৎ ঋতু। প্রকৃতিতে যখন এ শরৎ ঋতু বা শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এ ঋতুর আগমনী বার্তা। কুড়িগ্রামের চিলমারীতে চরাঞ্চলসমুহ সেই শরতের শুভ্র কাশফুলে সেজেছে। বৈচিত্রময় প্রকৃতিতে শরতের কাশফুল দেখে যে কারোরই চোখ ও মন জুড়িয়ে আসবে। প্রকৃতির এই রুপকে দেখতে তাই প্রকৃতি প্রেমিদের ঢল দেখা দিয়েছে চিলমারীর চরাঞ্চল সমুহের কাঁশ বনে বনে।
ছয় ইউনিয়নের চিলমারী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নই ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভাজিত। ইউনিয়ন তিনটি হচ্ছে চিলমারী ইউনিয়ন, নয়ারহাট ইউনিয়ন ও অষ্টমীরচর ইউনিয়ন। ইউনিয়ন তিনটির বিভিন্ন এলাকায় সবসময় চলে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গা-গড়ার খেলা। এ ভাবে জেগে উঠা অসংখ্য ধু-ধু বালুচর রয়েছে এই চরাঞ্চলসমুহে। আর ওই বালুচরগুলিতেই যেন শরতে কাশফুলের পশরা মেলেছে কাঁশ বনে বনে। চরাঞ্চলের কৃষকরা এ কাশবন নিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখছে। আর প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটছে অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রতিদিন প্রকৃতি প্রেমিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে ব্রহ্মপুত্রের বুকে থাকা চরাঞ্চলগুলো। এখানকার চরাঞ্চলসমুহ চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্গম হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছে শুভ্র সাদা এই কাশফুলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কাশফুল বাতাসে দোল খাওয়ার দৃশ্য যে কেউ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকবে। ধু-ধু চরাঞ্চল হওয়ায় কাশফুলের সাথে শোভা বৃদ্ধি করে থাকে কখনো আকাশের কালো মেঘ আবার কখনো নিল-সাদা মেঘ। তাই এসময়ে মেঘ-পানি আর শুভ্র কাশফুলের খেলা দেখতে প্রতিনিয়ত নানা বয়সের প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে আসছেন ব্রহ্মপুত্রের বুকে।
নয়ারহাট ইউনিয়নের কৃষক মাহফুজার রহমান বলেন, চরে এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৬শ থেকে দু’হাজার কাশিয়ার আটি হয়। কাশিয়া(কাশ) কেটে আটি বেঁধে ১০-১২টাকা করে বিক্রি হয়। এই কাশ বিক্রি করে গড়ে প্রতি বিঘা জমি থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা আসে। সাধারনত কার্তিক মাসে চরাঞ্চল সমুহে অভাব দেখা দেয়। এসময় কাশিয়া(কাশ) বিক্রি করে যে টাকা আসে তাতে কার্তিক মাসের অভাব পার হয়ে যায় এখানকার মানুষের।
সোমবার বিকেলে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চিলমারী ইউনিয়নের কাশবনের কাশফুলের শুভ্র সৌন্দর্য দেখতে আসা প্রকৃতি প্রেমি আলমগীর হোসাইন, শান্ত বাবু, মুশফিকুর হাসান মাহি, বায়জিদ হাসান বাপ্পি, সাগর সরকার বিধান, জীবন কুমার, আকাশ, সৌরভ সরকার, মিজানুর রহমানসহ অনেকে বলেন, আমরা প্রায়ই নৌকা ভাড়া করে বিভিন্ন চরে কাশফুল দেখতে আসি। উপজেলা শহর থেকে সকালে কাশফুল দেখতে আসলে প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দেখতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় তা মনেই থাকে না। এসময় রংপুর থেকে আসা তন্ময় সরকার জানান, তিনি চিলমারীর কাশফুলের কথা শুনে রংপুর থেকে ৮০ কি.মি.পথ পারি দিয়ে ছুটে এসেছেন কাশফুল দেখতে। শুভ্র এই ফুলের সৌন্দর্য তাকে বিমোহিত করেছে বলে জানান তিনি। শুভ্র ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসা প্রকৃতি প্রেমিরা জানান, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে চিলমারীর এই চরাঞ্চলে পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।