গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পৌরসভা, মইলাকান্দা ও মাওহা ইউনিয়নে ‘ওমেন্স কর্ণার’ নামে মহিলা বিপনী বিতান নির্মাণ করা হয়। এসব বিপনী বিতানের দোকান বরাদ্দের জন্য স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে শুধুমাত্র মহিলা উদ্যোক্তাদের মাঝে দোকান বরাদ্দের নীতিমালা ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন সময়ে প্রায় ২কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব বিপনী বিতানে নারীদের ভাগ্যে জুটেনি কোন দোকান। নিয়ম-নীতি বহির্ভূতভাবে প্রায় ২২বছর ধরে এসব মার্কেটে দোকানগুলো দখল করে আছে পুরুষরা।
জানা যায়, প্রায় ২কোটি টাকা ব্যয়ে তৎকালীন সময়ে গৌরীপুর পৌরসভার মধ্যবাজারে পৌর মহিলা বিপনী বিতান, মাওহা ইউনিয়নের ভূটিয়ারকোনা নারী দোকান শেড ও মইলাকান্দা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ওমেন্স কর্ণার নির্মাণ করা হয়। গোবিন্দপুর ওমেন্স কর্ণারটি ২০০২সনে মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ এবং গৌরীপুর পৌরসভার পৌর মহিলা বিপনী বিতানটি ২০০৬সনে গৌরীপুর পৌরসভার নিকট হস্তান্তর করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোবিন্দপুর ওমেন্স কর্ণারটি ইউনিয়ন পরিষদের নিকট হস্তান্তরের পর ২০০২সনের ২০জুন তৎকালীন সাবেক এমপি এএফএম নজমুল হুদা উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এ মার্কেটটি নিয়মনীতি বহির্ভূতভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করা হলেও দোকান বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো বরাদ্দপত্র দেয়া হয়নি। মার্কেটের ১২টি দোকানের মধ্যে ৪/৫টি দোকান পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্য দোকানগুলো গোদাম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরমধ্যে দোকানের সবগুলো ফ্যান, বিদ্যুৎ সরবরাহের সরঞ্জামসহ একটি দোকানের সাটারও চুরি হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনও জানে না এটা ওমেন্স কর্ণার। মইলাকান্দা ইউনিয়নে মহিলা মার্কেট আছে শুনে বিস্মৃত হন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদে এ মার্কেটের কোনো তথ্য আছে বলে আমার জানা নেই।
উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব বলেন, নির্মাণের পর মার্কেট স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে গৌরীপুর পৌরসভার মধ্যবাজারে পৌর বিপনী বিতানের ১৬টি দোকানই এখন প্রভাবশালী পুরুষ ব্যবসায়ীদের গোদাম। আর মার্কেটের সামনে অবৈধ দোকানপাটের রাজত্ব। মার্কেটটি ২০০৬সনে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর নারী ব্যবসায়ী দোকান খোলায় মার্কেটের সামনে বড় মসজিদ হওয়ায় মুসুল্লিদের আপত্তি ওঠে। এ নিয়ে ২০০৮সনে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো মার্কেটটির আউটডোর সাইড অফ করে, ইনডোর সাইড করা হবে। যা ১৬বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
মার্কেট প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মদন মোহন দাস জানান, দোকান বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী মার্কেটের ১৬টি দোকান ১৬জন মহিলাকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকানীরা সাবভাড়া দেয় ও পৌরসভার নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করে নাই। দোকান মেরামতের কারণে তৎকালীন পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ২০১১সনে দোকানদারদের বরাদ্দ বাতিল করে তাদেরকে উচ্ছেদ করেন। সেই দোকানগুলো পরবর্তীতে মৌখিকভাবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট গোডাউনের জন্য ২০২০সাল পর্যন্ত দেয়া ছিলো। এরপরে কিভাবে কারা আছে জানা নেই, তবে তারা অবৈধ দখলদার। সবগুলো দোকান পুরুষদের দখলে আছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গৌরীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগম বলেন, নারীদের অগ্রগতি ও তাদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য সরকারের এ উদ্যোগ শুধুমাত্র দোকান বরাদ্দের নীতিমালা না মেনে চলায় নারীরা বঞ্চিত হয়েছে। সরকারের উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী এসব দোকান নারী উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের মাঝে বরাদ্দ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা বলেন, মহিলা মার্কেটের ফাইল খুঁজে বের করা হচ্ছে। পৌর পরিষদ নেই, পৌর পরিষদ হলেই দোকান বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী দোকান বরাদ্দ প্রদান করা হবে। প্রয়োজনী সংস্কার ও মেরামতও করা হবে।