মোঃ ইয়াকুব আলী, চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: শীতের আগমন শুরু হতে না হতেই খেজুর রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত যশোরের চৌগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় রস ও গুড় আহরণের জন্য চলছে প্রস্তুতি। এখানকার গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার খেজুরের রস আহরণের মধ্য দিয়েই এ গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ।
কথায় আছে “যশোরের যশ খেজুরের রস”। তাই শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই গাছ থেকে রস আহরণের পূর্ব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে যশোরের চৌগাছাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে।
মঙ্গবার বিকালে উপজেলা হাকিমপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের দক্ষিন মাঠে সরেজমিনে খেজুর গাছ তোলার দৃশ্য চোখে পড়ে। রস সংগ্রহের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে খেজুর গাছের আগায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাটাকুটি বা তোলাার কাজ চলছে। ধারালো দা (গাছি দা) দিয়ে খেজুর গাছের মাথার সোনালি অংশ বের করা হয়। একে যশোরের মানুষের ভাষায় বলে খেজুর গাছ তোলা। এর ৮ থেকে ১৪ দিন পর নোলন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের মূল কাজ। এর কিছুদিন পরই ওই সব গাছে লাগানো হয় মাটির ভাড় বা পাতিল। এর থেকে সংগ্রহ করা হয় মিষ্টি স্বাদের খেজুরের রস। ওই রস দিয়ে তৈরি করা হয় লোভনীয় গুড় ও পাটালি।
শীত যত বাড়বে, খেজুর রসের মিষ্টিও তত বাড়বে। শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ দিনের শুরুতে খেজুরের রস, সন্ধ্যায় রস ও সুস্বাদু গুড়-পাটালি। শীত মৌসুমে যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে খেজুুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা-পায়েস সহ নাম না জানা হরেক রকমের মুখ-রোচক খাবার তৈরির ধুম পড়ে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল ধরেই গ্রামবাংলার প্রধান উপকরণ খেজু রের গুড়। খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজও এ এলাকার অনেক কৃষকের প্রধান শীতকালীন পেশা। এখন যেন চলছে তারই পূর্ব প্রস্তুতি।
উপজেলার জগদীশপুর গ্রামের জিন্নাত আলীসহ বেশ কয়েজন গাছি বলেন, প্রথমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের আগা কাটা হয়। মৌসুমের শুরুতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হওয়ায় একা সম্ভব হয় না। তাই গাছের আগা কাটার জন্য গাছিদের ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা মজুরি দিয়ে গাছ কাটাতে হয়। হাকিৃপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের তোরাব বলেন, রস সংগ্রহের সময় অর্থাৎ শীত মৌসুমের পুরো চার মাসজুড়ে বাড়িতে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। ওই সময় আমাদের প্রতিদিন আয় হয় এক থেকে দুই হাজার টাকা। অনেকের আবার খেজুর গাছ কেটেও সংসার চলে।
চৌগাছা বাজারের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, এসব হাট থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি কিনে সারা দেশে সরবরাহ করেন। এখানকার কারিগরদের পাটালি তৈরিতে সুনাম থাকায় খেজুরের গুড়-পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের অন্যান্য জেলায় এমনকি দেশের বাইরেও। অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি গাছিদের কাছে অর্ডার দিয়ে পাইকারি মূল্যে কিনে দেশের বাইরেও সরবরাহ করে থাকেন যশোরের সুস্বাদু এই গুড়-পাটালি।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোদাব্বির হোসেন বলেন, যশোরের খেজুরের গুড়কে গত বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানকার খেজুরের রস ও গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারী ভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। গত বছর এ উপজেলা সরকারী খাস পরিত্যক্ত জায়গায় হাজার হাজার খেজুর গাছের চারা ও বীজ রোপন করা হয়েছে। সেইসাথে গাছিদের প্রশিক্ষণ, গুড় ও পাটালীর মেলাসহ, গাছি কল্যান সমিতি গঠন করা হয়েছে।