শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরে ৩৫৫ বন্দি জেল পালানোর দীর্ঘ পৌনে ৩ মাস পরও গ্রেফতার হয়নি। সাজাপ্রাপ্তসহ নানা গুরুতর অভিযোগের মামলায় ওইসব বন্দিরা পলাতক থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে ঘটনার পরও এখনও সচল হয়নি জেলা কারাগার। এতে বাড়ছে নানা সমস্যা-সংকট। আগামী দুমাসেও তা সচল করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
এদিকে কারাগার সচল না থাকায় শেরপুরের নানা মামলায় হাজতী আসামিদের রাখা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলা কারাগারে। এতে কোর্ট পুলিশের পাশাপাশি আদালতের কার্যক্রমে আসামি ও আইনজীবীদেরকেও বাড়তি সমস্যা ভোগ করতে হচ্ছে। ওইসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এছাড়া কারাগার সচল করতে চলছে মেরামতের কাজ। সচল হলেই সমস্যা শেষ হবে।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওইদিন বিকেলেই দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় শেরপুর জেলা কারাগারে। ওইসময় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করলে কারাগার থেকে পালিয়ে যায় সাজাপ্রাপ্তসহ নানা গুরুতর অভিযোগের মামলার ৫১৮ বন্দি। কারাগার ও আদালত সূত্রের তথ্যমতে, ২৭ অক্টোবর রবিবার পর্যন্ত ঘটনার প্রায় পৌনে ৩ মাসে পলাতক বন্দিদের মধ্যে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন ১৩৬ বন্দি। আর একই সময়ে র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন আরও ২৭ বন্দি। ফলে এখনও পলাতক রয়েছেন ৩৫৫ বন্দি।
অন্যদিকে ওই ঘটনার একই সময় পর্যন্ত এখনও সচল হয়নি কারাগারের কার্যক্রম। ফলে পলাতকদের মধ্যে অনেক চিহ্নিত অপরাধীরাও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত। স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, যারা চিহ্নিত অপরাধী, তাদের এখনও কারাগারে ফেরত আনা যাচ্ছে না। ফলে তারা সুযোগমতো যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য বিরাট হুমকির বিষয়।
র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুরের কোম্পানী কমান্ডার মেজর মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেল কর্তৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ী জেল পলাতকদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৭ জন জেল পলাতক বন্দিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। আমাদের লক্ষ্য হলো পলাতক আসামিদের যতদ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
এদিকে টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ কাজ শুরু করতে নানা অজুহাতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও দায় নিতে রাজি নয় গণপূর্ত বিভাগ। গণপূর্ত বিভাগ শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা কোনো কালক্ষেপণ করিনি। যখনই নির্দেশনা পেয়েছি সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। টেন্ডার শিডিউলে যে সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
আর কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পুরোদমে মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত কাজ শেষ করলেই কারাগারের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হবে।
শেরপুর জেলা কারাগারের সুপারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার গাজী আশিক বাহার বলেন, গণপূর্ত বিভাগ যত দ্রুত মেরামত কাজ শেষ করবে, আমরা তত দ্রুতই কারাগারের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। তবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেরামতের কাজ শেষ করতে আরও প্রায় ২ মাস সময় লাগতে পারে।