ঢাকা
৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:০৭
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ৫, ২০২৪

বর্ণিল এক প্রাথমিক বিদ্যালয়,সকলেই হতে চাই 'স্টুডেন্ট অফ দা ডে'

মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের সামনে বারান্দা, সিঁড়িঘর, মেঝে ও আশপাশ এভাবেই রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের বারান্দার দেওয়ালে লেখা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষনীয় বিষয়। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ও বাইরে দেয়াল, বারান্দা, ছাদ, জানালাসহ সর্বত্র বর্ণিল আলপনা। সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, সাজানো অফিস—কী নেই স্কুলটিতে! জরাজীর্ণ ভবন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের চিরাচরিত ধারণার বাইরে এটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম আজম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাদের পড়ালেখার প্রতি উৎসাহ প্রদান করার লক্ষ্যে প্রত্যেক শ্রেণী হতে একজন শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট অফ দা ডে নির্বাচন করা হয়। প্রত্যেক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট অফ দা ডে হন তাকে স্টুডেন্ট অফ দা মান্থ হিসেবে শিক্ষা উপকরণ পুরষ্কার দেওয়া হয়। প্রতিদিন স্টুডেন্ট অব দ্যা ডে প্রত্যেক শ্রেণী হতে একজনকে শিক্ষার্থীর স্কুল ড্রেস, বাড়ির কাজ, বাংলা ও ইংরেজি সুন্দর হাতের লিখা, বাংলা ও ইংরেজি রিডিং পড়া, ক্লাসে সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর- দেওয়া, বড়দের সালাম ও ছোটদের স্নেহ করাসহ প্রতিদিন একটি ভালো কাজ করা এ বিষয়গুলোর উপর স্টুডেন্ট অফ দা ডে নির্বাচন করা হয়। আর এই স্টুডেন্ট অফ দা ডে নির্বাচীত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অ্যাসেম্বেলী এর সময় নাম ঘোষণা করা হয় এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট অফ দা ডে হওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়। এতে করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাঝে পড়ালেখার পাশাপাশি ভালো কাজ করার মনোবৃত্তি তৈরি হয় এবং সকলেই হতে চায় 'স্টুডেন্ট অফ দা ডে'।

বিদ্যালয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালে স্থাপিত হলে বিরামপুর এলজিইডির বাস্তবায়নে ১৮ মার্চ ১৯৯৯ সালে প্রকল্পিত ব্যয় ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫ শত টাকায় ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ হয়। বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করন হলেও অদ্যাবধি আর কোন ভবন নির্মাণ হয়নি বিদ্যালয়টিতে। বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় আছে মাত্র ৩টি কক্ষ। ১ টি কক্ষ অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর ২ টি ১ম ও ২য় শ্রেণীর জন্য ব্যবহার করা হয় এছাড়াও প্রাক প্রাথমিকের পাঠ দান বাধ্য হয়ে সিঁড়ি রুমে নেওয়া হয়। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১২১ জন উপস্থিতি প্রায় শতভাগ। গতবছরসহ এ বছরেও বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার কঠোর পরিশ্রমের কারনে উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসেবে তিনি দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বিশ্বনাথপুর এলাকার কাঁচা রাস্তার পাশে পূর্ব দিকে বাউন্ডারি বিহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাস্তা থেকে দেখা মেলে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের দৃশ্য। ১৯৯৫ সালে ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫ শত টাকায় এলজিইডি প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্মিত পুরাতন একটি ভবন। এ ভবনেই চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ভবনটির বারান্দায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে এর দেয়ালের বিচিত্র রূপ। এ যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। দেয়ালজুড়েই বিভিন্ন রঙে আঁকা হয়েছে গাছপালা, পশুপাখি, পাঠ্যবইয়ের অলংকরণ। কোথাও আবার স্থান পেয়েছে দেশের বিশিষ্ট লেখক, কবি-সাহিত্যিকদের ছবি।শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও দেয়ালজুড়ে বর্ণ ও অক্ষরের পাশাপাশি নানা রঙের ছোঁয়া। ছাদ ও দেয়ালে আঁকা হয়েছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রূপ। কোনো কোনো শ্রেণিকক্ষের ছাদে সুকৌশলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রংধনু সহ আকাশের দৃশ্য। এমন নানা বর্ণিল চিত্র প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের। বিদ্যালয়টির কার্যালয় কক্ষটি নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম আজম বলেন, মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টির জন্য আমি স্কুলটিকে সব বিষয়ে শতভাগ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা এখন অপেক্ষায় থাকে কখন স্কুলে যাবে। তাদের জন্য আনন্দময় পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তাঁর স্কুলে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসে। তাদের আনন্দের মধ্য দিয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান।শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার জন্য তিনি নিজ চেষ্টায় এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সহযোগিতায় শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা ও অফিসকক্ষ সুন্দর করে সাজিয়েছেন।এসবের ফলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে বেশি আগ্রহ বোধ করে।

বিদ্যালয়ের এমন পরিবেশ দারুণ উপভোগ করছে শিক্ষার্থীরা।বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অফ দ্য মান্থ এর প্রথম শ্রেণি কৌশিক বাবু,দ্বিতীয় শ্রেণি রাফীমুন জীম,তৃতীয় শ্রেণি স্নেহা তাসনুভা, চতুর্থ শ্রেণি মাইশা আক্তার,পঞ্চম শ্রেনি তাসনিম জাবিন বলে, স্কুলের রঙিন পরিবেশ তাদের ভীষণ ভালো লাগে এমাসে তাদের শ্রেণীতে সেরা শিক্ষার্থী হতে পেরে তারা খুব আনন্দিত । প্রতিদিন স্কুলে আসার অপেক্ষায় থাকে তারা। একই ভাষ্য পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুহুল আমিন আক্তারের। সে জানায়, বিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতি ও শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে প্রত্যেকদিন ২য় শিফটের আগেই ১ম শিফটে আমরা সকলে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়।

বিষয়টিকে উৎসাহদায়ক হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিরামপুর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জনার্দন চন্দ্র দেবশর্মা। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টির বিশেষ ব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থী সহায়ক। অন্যান্য স্কুলও এভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মূখী করতে উদ্যোগ নিতে পারে।

শ্রেণী সংকটের কারণে খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের বিষয়ে জানতে চাইলে বিরামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীরসহ একটি ভবন জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram