গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মুক্ত জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কচুরিপানার ফুল। সবুজের মাঝখানে সাদা, বেগুনি ও হালকা গোলাপি রঙে বিভিন্ন খাল, ডোবা ও জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফুঁটে আছে অযত্নে বেড়ে ওঠা কচুরিপানা ফুল। দেখলে মনে হবে যেন সবুজের মাঝে সাদা, বেগুনি ও হালকা গোলাপি রঙের ফুলের চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে জলাশয়গুলো। প্রস্ফুটিত এসব ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সৌন্দর্য বিলানোর পাশাপাশি এই উদ্ভিদটি মানুষ ও প্রকৃতির নানা উপকারে আসে। এটি দেশীয় মাছের বংশবিস্তার ও জলাশয়ের পানি ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে থাকে। কিছু কিছু মাছ এটিকে খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে। এটি থেকে তৈরি জৈব সার কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে আসছে। পানির ওপর কচুরিপানার স্তুপ করে এর ওপর সবজি চাষ করা হয়। এ ছাড়াও এটি গোখাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সবমিলে এই কচুরিপানার বহুজাতিক গুণ রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাল, বিল, ডোবা, নিচু জমি, পুকুর ও বিভিন্ন জলাশয়ে ফুটে আছে কচুরিপানা ফুল। ফুটন্ত এসব ফুলের সৌন্দর্যে আসা-যাওয়ার পথে বিমোহিত হচ্ছেন প্রকৃতি ও ফুলপ্রেমী মানুষসহ পথচারীরা। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের খেলনা হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই ফুল। সৌন্দর্যপ্রেমীরা এসব ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মোবাইল ফোনে ফুলের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট করছে। আবার কেউ কেউ ফুলের সঙ্গে নিজেকেও ক্যামেরাবন্দি করছেন পরম আনন্দে।
কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান এক ধরনের বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Eichhornia। দক্ষিণ আমেরিকা এর আদি নিবাস। চকচকে সবুজ ডিম্বাকৃতির পাতাবিশিষ্ট কচুরিপানা পানির ওপরি ভাগে জন্মায় ও বংশবিস্তার করে। এর কান্ড থেকে দীর্ঘ, তন্ত্রময় বহুধাবিভক্ত মূল বের হয়, যার রং বেগুনি কালো। একটি কান্ড থেকে ছয়টি পাপড়িবিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয়ে থাকে। এই ফুলের পাপড়ি নরম হয়। এই উদ্ভিদ দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এদের সাতটি প্রজাতি রয়েছে।
সিধলা এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই এলাকার সিধলং বিলসহ কয়েকটি বিল রয়েছে। এসব বিল ও জলাশয়ে কচুরিপানা ফুল ফুটে আছে। অনেকে জলাশয় পরিষ্কার করে এসব কচুরিপানা তুলে পচিয়ে জৈবসার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করে। অনেকে রোদে শুকিয়ে রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। এ ছাড়াও কচুরিপানা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে।
প্রকৃতিপ্রেমী সাংবাদিক প্রভাষক মোখলেছুর রহমান বলেন, কচুরিপানা ফুল গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি ফুল। মুক্ত জলাশয়ে শাপলা, পদ্ম ও কচুরিপানা ফুলের সৌন্দর্য্য মানুষকে মুগ্ধ করে। নকশাখচিত কচুরিপানা ফুলের পাপড়ি মানুষকে আকৃষ্ট করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জলি বলেন, কচুরিপানার মাধ্যমে জৈব সার প্রস্তুত করা যায়, যা কৃষকের কাজে আসে। বর্তমানে কোথাও কোথাও এই উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি জৈব সার বাণিজ্যিকভাবেও বেচাকেনা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান সবজি চাষেও কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও এই উদ্ভিদটি গো খাদ্যের চাহিদা মেটানোসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।