শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: আজ ভয়াল সিডর দিবস। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এই দিনের মধ্যরাতে সুপার সাইক্লোন সিডর আঘাত হানে বঙ্গোপসাগর উপকূলে। মূহুর্তের মধ্যেই লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় সাগর তীরবর্তী কয়েকটি জেলার মানুষের জীবন ও জনপথ। তবে সিডরে সব চেয়ে বেশী আঘাত হানে সুন্দরবন উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলায়। ২৪০ কিঃমিঃ বেগের ঝড় এবং ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস নিমেষেই বলেশ্বর নদ তীরবর্তী ২০ কিঃমিঃ বেড়িবাধ ভেঙ্গে সবকিছু তচনছ করে দেয়। এ সময় স্থানীয় সাউথখালী ও রায়েন্দা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের সহাস্রাধিক মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়। এছাড়া ১২ হাজার গবাদি পশুও মারা যায় এ ঝড়ে। গৃহহীন হয় ৮ হাজার পরিবার।
পরবর্তীতে শরণখোলার মানুষকে সুরক্ষা দিতে সরকার বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাগেরহাটের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে ৬২ কিঃমিঃ এলাকায় বেড়িবাধ নির্মাণ করেন। কিন্তু গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাধ নির্মাণ কাজ হস্তান্তরের পরপরই বাধের অন্তত ১৫ টি পয়েন্টে দেখা দেয় ভয়ংকর ভাঙ্গন ও ব্লক ধ্বস। নব নির্মিত বাধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকায় রয়েছেন বলেশ্বর নদ তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ। এ ঘটনায় স্থানীয়রা বিশ্বব্যাংকের বাধ নির্মাণ প্রকল্পে নদী শাসনের ব্যাবস্থা না রাখা এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনিয়মকে দায়ী করেছেন। তারা দ্রুত নদী শাসন করে বাধ রক্ষা ও দায়ীদের বিচারের দাবী জানিয়েছেন।
জানা যায়, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের সিআইপি বাধ নির্মান প্রকল্পে আর্থীক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৬০ কোটি টাকা। চায়নার সিএইচ ডব্লিউ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বাধ নির্মাণের দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালের জুন মাসে বাধের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালে নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাধের কাজ সমাপ্ত করা হয়। কিন্তু হস্তান্তর হওয়ার পরপরই বাধের অন্তত ১০টি পয়েন্টে দেখা দেয় ভাঙ্গন ও ব্লক ধ্বস। ইতোমধ্যে বলেশ্বর তীরবর্তী গাবতলা, রায়েন্দা ও রাজৈর অংশে বাধের প্রায় তিন কিলোমিটার ঢালের ব্লক ধ্বসে গেছে জলোচ্ছাসে।
উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত দক্ষিন সাউথখালী গ্রামের বাসিন্দা ইউসুব হাওলাদার, রুহুল আমীন খোন্দকার, মিজানুর রহমান হাওরাদার জানান, সিডরের আঘাতে তাদের গ্রাম থেকে চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হযেছিলো। তখন থেকেই তাদের দাবী ছিলো একটি টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ করে দেওয়ার। শত শত কোটি টাকা খরচ করে বাধ করা হয়েছে ঠিক কিন্ত বাধ টেকসই হয়নি। এমন বাধ তারা চাননি। নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই বাধের ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাধ ভেঙ্গে লোকালয় প্লাবিত হতে পারে। নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেে এলাকাবাসি। তারা দ্রুত বাধ সংরক্ষনের দাবী জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শরণখোলা উপজেলা আহবায়ক কমিটির সচিব ও সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পঞ্চায়েত জানান, বাধ নির্মাণ কাজে নদী শাসনের ব্যবস্থা না রাখা ছিলো তৎকালীন সরকার ও বাধ বাস্তবায়নকারী সংস্থার চরম দুর্বলতা। চায়না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজে চরম দুর্নীতি করেছে। মাটির বদলে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বাধ উচু করেছে। এখন সাধারণ ঝড় বন্যায় বাধ ধ্বসে পড়ছে। বিষযটি বর্তমান সরকারের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন এবং দ্রুত নদী শাসন করে বাধ রক্ষা করারও দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুদীপ্ত কুমার সিংহ জানান, আমরা ইতোমধ্যে স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা বাধ রেকি করে গিযেছেন। ইতোমধ্যে বাধের ৩৫টি গর্ত মেরামত করা হয়েছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী জানান, সিআইপির বাধ উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৫/১ পোলডারের কাজ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটকে হস্তান্তর করা হয়। সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।