মোঃ তানফিজুর রহমান , লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি: প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরিঞ্জা এলাকায় মেঘ ও পাহাড়ের মিতালী দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভীড় করছেন।এখানকার সবুজ পাহাড়ের সাথে শুভ্র মেঘের লুকোচুরি খেলা আর শিল্পীর পটে আঁকা ছবির মত সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমন পিয়াসী এসকল পর্যটক। মিরিঞ্জা পাহাড়কে কেন্দ্র করে লামায় খুলছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমন পিয়াসী মানুষেরা প্রতিনিয়ত ছুটে ছলছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তরে। বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলার প্রকৃতি যেন বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ। তাইতো এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে লাখ লাখ ভ্রমন পিয়াসী মানুষ প্রতিদিন পার্বত্য জনপদের বিভিন্ন প্রান্তরে ভ্রমন করছেন। পার্বত্যাঞ্চলে ভ্রমনে আসা পর্যকদের কাছে এতদিন ভ্রমনের জন্য খাগড়াছড়ি জেলার সাজেক প্রথম পছন্দ হলেও সম্প্রতি নান্দনিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর চোখ জুড়ানো সবুজ প্রকৃতি এবং রোমাঞ্চকর লামার মিরিঞ্জা পাহাড় এলাকা পর্যটকদের
কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। এখানকার প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র ও মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা উপভোগ করতে প্রতিদিনই হাজার হাজার সৌন্দর্য পিয়াসী পর্যটকের আগমন ঘটছে।
এসকল পর্যটকদের সেবা দিতে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, মিরিঞ্জা ভ্যালী , মারাইংছা হীল , সানসেট , মেঘবেলা , ডেঞ্জার হীল , টপ পয়েন্ট ভিউ , চুংদার বক, সবুজ দিগন্ত রিসোর্ট, মারাইংচা ওয়াইল্ডসহ বেশ কয়েকটি রিসোর্ট। এসকল রিসোর্টের কর্টেজ , জুম ঘর ও তাবুতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক রাত্রি যাপন করে প্রকৃতির রূপসুধা উপভোগ করছেন।
সমুদ্র পৃষ্ট থেকে প্রায় ১৮শ’ ফুট উপরে মিরিঞ্জার রোমাঞ্চকর ও সুউচ্চ পাহাড় চুড়ায় দাড়িয়ে যতদূর চোখ যায় শুধুই সবুজের সমারোহ। সবুজ পাহাড়ের গা ঘেষে ছুটোছুটি করছে শুভ্র মেঘ। কখনো কখনো এক চিলতে মেঘ এসে দর্শনার্থীদের বুলিয়ে দিচ্ছে তার হিমেল পরশ। জুম ঘরের বারান্দায় বসে মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা যে কোন আগন্তুককে ভুলিয়ে দিবে তার বিগত দিনের সকল ক্লান্তি। রাতের নিস্তব্দতায় সবুজ পাহাড়ের গা ছুয়ে বয়ে চলা ঝর্ণার কল কল ধ্বনি যেমন পর্যটকদের শিহরিত করে, ঠিক তেমনি ভোঁরের দিগন্ত বিস্তৃত সাদা মেঘের ভেলা পুলকিত করে তোলে প্রতিটি সৌন্দর্য পিয়াসী মন।
মিরিঞ্জা ভ্রমন শেষে চাইলে পর্যটকরা ঘুরে আসতে পারে লামা শহর থেকে। এখানে লামা পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে গড়ে উঠেছে তং থমাং রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট। এসি এবং নন এসি রুম সার্ভিসসহ রয়েছে থাই চাইনিজ ও হরেক রকমের বাংলা খাবারের ব্যবস্থা। কলেজ সংলগ্ন নুনারঝিরি এলাকায় রয়েছে অন্যন্য রিসোর্ট । এখানেও একইভাবে থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। লামা বাজারে থাকা-খাওয়ার জন্য রয়েছে ফুড হিল ওকুটুমবাড়ী রেস্টুরেন্ট এবং আবাসিক হোটেল সী-হীলসহ কয়েকটি হোটেল। এছাড়া রয়েছে সুখিয়া ভ্যালী, রিভার ভিউ, রিভার হীলসহ আরো কয়েকটি রিসোর্ট। লামা বাজার ঘেষে বয়ে গেছে পাহাড় কন্যা স্রোতস্বীনি মাতামুহুরী। চাইলে নৌকা যোগে এ নদী ভ্রমনে যেতে পারেন পর্যটকরা। মাতামুহুরীর বাঁকে বাঁকে প্রকৃতির যে অপার সৌন্দর্য, তা প্রত্যেকটি সৌন্দর্য্য পিয়াসী মনকে বিমোহীত করবে।
রাজশাহী থেকে আসা ইসতিয়াক হাছান, যশোরের রবীন এবং ঢাকার লাবনীসহ ঘুরতে আসা পর্যটকদের অনেকেই একই সুরে বললেন, এখানকার সবুজ প্রকৃতি আর শুভ্র মেঘের দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ। এখানে পাহাড় চুড়ায় দাড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত যে মেঘ দেখা যায় তা দেখে মনে হচ্ছে এইটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাজেক। তবে প্রধানসড়ক থেকে রিসোর্ট গুলোতে যাওয়ার রাস্তা এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা দরকার বলেও তারা মনে করছেন।
লামা উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান চৌং বলেন, মিরিঞ্জা একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পানি, বিদ্যুৎ ও রাস্তার ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় টুরিষ্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে সহজেই এখানে আসা যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী এন.আর ট্রাভেলস্ এবং হানিফ বাস সার্ভিসে লামা-আলীকদমের গাড়ীতে রাতে রওয়ানা দিয়ে ভোঁরে লামা মিরিঞ্জা এলাকায় নামতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া নেমেও যাত্রিবাহী বাস কিংবা জীপে করে আসা যায়। তবে আসার পূর্বে পছন্দের রিসোর্ট বুকিং দিয়ে আসতে হবে। লামার মিরিঞ্জা পাহাড়ের সাথে মেঘের যেন জনম জনমের মিতালী। জুম ঘরে বসে দেখা মেঘ-পাহাড়ের এ মিতালী প্রতিটি আগন্তুকের নগর জীবনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিবে ।