এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: প্রতি বছরের মতো এবারও বাঙালির সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নবান্ন উৎসবকে ঘিরে জমজমাট হয়ে উঠেছে কালাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে অনুষ্ঠিত এই মেলা দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
শীতের ঘন কুয়াশা কাটিয়ে রবিবার (১৭ নভেম্বর) ভোর থেকেই মেলার প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়। সারি সারি মাছ ব্যবসায়ী তাঁদের পসরা নিয়ে বসেন। কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, ব্ল্যাককার্প, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্পসহ নানা প্রজাতির মাছ বিক্রির জন্য সাজানো হয়। মেলায় চোখে পড়ে একেকজন মাছ বিক্রেতার আকর্ষণীয় আয়োজন।
বিশালাকৃতির একটি ১৫ কেজি ওজনের সিলভার কার্প মাথায় তুলে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাইয়ের পৌর এলাকার মন্সিপাড়া গ্রামের মাছ বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম। এই মাছের দাম হাঁকা হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে বিগহেড কার্প ও সিলভার কার্প। রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে।
মেলার আরেকটি আকর্ষণ হলো জামাই-মেয়েদের প্রতিযোগিতা। কে কত বড় মাছ কিনলেন, তার উপর নির্ভর করে জামাইয়ের মর্যাদা। শ্বশুররা এই প্রতিযোগিতায় নীরবে অংশ নেন, যা মেলায় বাড়তি আকর্ষণ যোগ করে। মেলার উপলক্ষে এলাকার ঘরে ঘরে মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দেওয়া হয়। ফলে পুরো এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
মাছ কিনতে আসা মুলগ্রাম গ্রামের গোলাম মোস্তফা, আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের ডাঃ জহুরুল ইসলাম এবং কালাই কলেজ পাড়ার মনোয়ারা বেগম বলেন, এবারের মেলায় আগের বছরের চেয়ে মাছের আমদানি বেশি হলেও দাম কিছুটা বেশি। মাছ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১,২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, যা মেলার সবচেয়ে বড় মাছ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
অপর ব্যবসায়ী রাজু, বাবু, ও মানিক জানান, লোক সমাগম প্রচুর হলেও বেচাকেনা কিছুটা কম। তবু তাঁরা ভালো বিক্রির আশায় রয়েছেন। হাট ইজারাদার ময়েন উদ্দিন বলেন, শুধু জয়পুরহাট নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও ব্যাপারীরা এই মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসেন। বাজারের দামও স্বাভাবিক আছে, ফলে সবাই কিনতে পারছেন।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, “নবান্ন উপলক্ষে প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলা আয়োজন করা হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। মেলায় কেউ যাতে নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি করতে না পারে, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।”