এম মনিরুজ্জামানের, রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রোববার (২৪ নভেম্বর) রাত ৯ টায় রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন। এতে ২৩ জন ছেলে এবং ৮ জন মেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫ জনকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে। কোনো প্রকার হয়রানি, সুপারিশ ও ঘুষ-তদবির ছাড়াই পুলিশের সদস্য হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হতদরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও কৃষক পরিবারের এসব তরুণ-তরুণী।
চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাওয়া এই ৩১ তরুণ-তরুণী মাত্র ১২০টাকা সরকারি ফি দিয়ে আবেদন করেছিলেন। এ জন্য তারা বলছেন ১২০ টাকায় স্বপ্ন পূরণ ৩১ তরুণ-তরুণীর।
সারাদিন অপেক্ষার পর রাত ৯টায় চূড়ান্ত ফল ঘোষণার সময় এক আনন্দঘন মুহূর্ত দেখা গেছে পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে। নিজ যোগ্যতা ও মেধায় চাকরির ফলাফল পাওয়া মাত্রই ৩১ জন তরুণ-তরুণী আনন্দে বিমোহিত হয়ে পড়েন। অনেকের নাম ঘোষণার পরপরই দুই চোখ আনন্দ অশ্রুতে ভিজে যায়। অনেকেই চাকরি পেয়ে আনন্দ উল্লাস করেন।
ফলাফল ঘোষণা শেষে চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভিনসহ নিয়োগ বোর্ড ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ সময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ লুৎফুল কবির চন্দন, মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) কাজী হুমায়ুন রশিদ, রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরীফ আল রাজীবসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আমার বাবা একজন ভ্যানচালক। আমি মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিলাম। কখনো ভাবিনি এই ১২০ টাকা দিয়েই আমার চাকরি হয়ে যাবে। ভাবতাম টাকা ছাড়া পুলিশে কোন চাকরি হবে না। আমি নিজে চাকরি পেয়ে বুঝতে পারলাম যে টাকা ছাড়াও পুলিশে চাকরি হয়। আবেগাপ্লুত হয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের রাজধরপুর গ্রামের মো. মিরাজ শেখের মেয়ে মোছা. মীরা খাতুন।
কনস্টেবল নিয়োগের চূড়ান্তভাবে প্রথম স্থান অধিকার করা সদর উপজেলার খানখানাপুর ব্যাপারী পাড়ার রহিম বিশ্বাস বলেন, আমার বাবা একজন সাধারণ শ্রমিক। তিনি অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়ালেখা করিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমার অনেক ভালো লাগছে আমি একজন গর্বিত পুলিশ সদস্য হতে পেরেছি। আমি অনেক পরিশ্রম করে নিজের মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আজ পুলিশে চাকরি পেয়েছি।
পাংশা উপজেলা কুড়াপাড়ার বাসিন্দা রিফাজুর রহমান বলেন, আমি পাংশা সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কনস্টেবল পদে সার্কুলার দেখে আমি আবেদন করেছিলাম। চাকরিটা আমার খুব দরকার ছিল। পাশাপাশি আমার স্বপ্ন ছিল আমি পুলিশে চাকরি করবো। চাকরিটা পেয়ে আমি খুব খুশি।
মীরা খাতুনের বাবা ভ্যান চালক মিরাজ শেখ বলেন, আমি একজন ভ্যানচালক। ভ্যান চালিয়ে দুই মেয়েকে মানুষ করেছি। অনেক কষ্ট করে তাদের লেখা পড়া শিখিয়েছি। বড় মেয়েটার গতবার চাকরি হয়নি। কিন্তু এবার বিনা পয়সায় চাকরি হয়েছে। আমার খুব ভালো লাগছে।
ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ কমিটির সভাপতি রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন বলেন, কনস্টেবল নিয়োগের কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্তভাবে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের তালিকা ঘোষণা করলাম। মেধাতালিকায় রাজবাড়ীতে ২৩ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী নির্বাচিত হয়েছে। যারা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে তারা সম্পূর্ণ তাদের দক্ষতা ও মেধার ভিত্তিতে মনোনীত হয়েছে। যারা মনোনীত হয়েছে তারা বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের, কৃষক পরিবারের সন্তান। মাত্র ১২০ টাকায় অনলাইন আবেদন করার মাধ্যমে তারা আজকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে। আমি আশা করছি তারা সকলেই দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে পুলিশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।
প্রসঙ্গত, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে রাজবাড়ীতে ৩১ জনের শূন্য পদের বিপরীতে অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছিল ২ হাজার ৩৩ টি। প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে ১ হাজার ৪৯৭ জন চাকরি প্রার্থী শারীরিক মাপ ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। শারীরিক মাপ ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা শেষে ৩৫৭ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। গত ১৭ নভেম্বর ৩৫৪ জন চাকরি প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০৭ জন উত্তীর্ণ হন। তারা ২৪ নভেম্বর মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে থেকে চূড়ান্তভাবে ৩১ জনকে (২৩ জন ছেলে ও ৮ জন মেয়ে) মনোনীত করে নিয়োগ বোর্ড৷এদের মধ্যে ২৬ জনকে নিয়োগ দিয়ে অপেক্ষমান রাখা হয় ৫ জনকে।