শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: শীত মৌসুমের সবজির মধ্যে অন্যতম শিম। প্রতিবছর এই মৌসুমে বাঁশখালী উপজেলার সমতল ভূমিতে আগাম শিমের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। পাশাপাশি বসতবাড়ীর আশপাশে ও পাহাড়ের সমতল জায়গায় শিমের চাষ করে থাকেন চাষিরা। চারিদিকে ছেঁয়ে গেছে শীতকালীন সবজি শিম। সবুজের চাঁদরে মোড়ানো শিম ক্ষেতে ফুল ফুটেছে। লালচে ফুল আর সবুজের মিলনে অপূর্ব সৌন্দর্য্যে কোথাও কোথাও শিম দোল খাচ্ছে। কম মূলধন ও স্বল্প পরিশ্রম করে অধিক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে শিমের আবাদ বাড়ছে। উর্বর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার শিম চাষের ব্যাপক ফলন হয়েছে বাঁশখালীতে। শীতকালীন সবজি হিসেবে জনপ্রিয় হওয়ায় বাজারের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। আগাম শীতকালীন শিমও বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগাম শিমে ভালো ফলন ও ন্যায্যমূল্যে দাম পাওয়ায় খুশী চাষিরাও। বর্তমানে বাজারে কেজিপ্রতি খুচরা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে শিম। পুরোদমে বাজারে শিম আসতে আরো ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষীরা।
বাঁশখালীকে সবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ উপজেলা হিসেবে ধরা হয়। বাঁশখালী কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দু-চোখ যেখানেই পড়ে সেখানেই দেখা মেলে সবুজের সমারোহ। এখানে কার্তিকীসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের শিমের চাষ হয়। এই এলাকার চাষীরা এখন বিভিন্ন সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক ও পিকআপে করে পাইকাররা শিমসহ বিভিন্ন শীতের সবজি নিয়ে যায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ভালো ফলন হওয়ার ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশের কারণে এ মৌসুমে শীতকালীন সব সবজির ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে বাঁশখালীতে সবজির আবাদ হয়েছে ৬৩৫০ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে শীতকালী সবজির চাষ হয়েছে ৩৮০০ হেক্টর জমিতে। শিম চাষ হয়েছে ৩৪০ হেক্টর, আগাম মুলা ২৫৫ হেক্টর, আগাম টমেটো ২৮০ হেক্টর জমিতে। এ অঞ্চলে শিমের ব্যাপক চাষ হয়। সাধারণত দুই জাতের শীম চাষ হয়। এর মধ্যে কার্তিকা শীমটা বেশি জনপ্রিয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সমতল এলাকায় শিমের চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলার পুঁইছড়ি, নাপোড়া, চাম্বলের পাহাড়ি জমি, শীলকূপের পাহাড়ী ও আবাদী জমি, জঙ্গল জলদী, পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালীপুর, বৈলছড়ি, সরল, খানখানাবাদ ও গন্ডামারা এলাকায় প্রতিবছরের মতো এবারও প্রচুর পরিমাণ শিম উৎপাদিত হয়েছে। কেউ কেউ শখের বসে বাড়ির আঙ্গিনায়ও ক্ষুদ্র পরিসরে শিমের চাষ করেছে। এতে করে নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মিটাচ্ছে তারা। পাশাপাশি প্রতিদিন চাষীরা ক্ষেত থেকে শিমগুলো তুলে এনে বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে পাইকারী দরে বিক্রি করছেন। বিশেষ করে উপজেলার শিলকুপ, পুঁইছড়ি, জঙ্গল চাম্বল, জঙ্গল জলদী, কালীপুর এলাকায় এই শিমের আবাদ হয়েছে দেখার মতো। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাঁশখালীর বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে ভীড় করছে ফ্রেশ সবজির জন্য। ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় খুশী চাষীরাও।
শীলকূপের চাষী আব্দুল খালেক জানিয়েছেন, 'এবার বিশ শতক জমিতে শিমের চাষ করেছেন। সার ও কীটনাশক সহ সবকিছু মিলে মোট খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো। আরো ১০ থেকে ১৫ দিন পর পুরোদমে শিম বাজারে তুলতে পারবো। ফলন ভাল হয়েছে। আশা করছি এবার চাষের ওই জমি থেকে শিম বিক্রি করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মতো লাভ করতে পারবো।' কয়েকটি এলাকার ঘুরে কথা হয় মো. হোছাইন সাও, কামাল উদ্দিন, ইসকানদার, বাহাদুর সহ কয়েকজন চাষীদের সাথে। তারা জানিয়েছেন, শীতকালীন সবজি এই শিমের এবার ভালো ফলন হয়েছে। এই শিম চাষের অল্প পুঁজিতে লাভবান হওয়া যায়। শিমের পাশাপাশি বীজের দাম পাওয়া যায় দ্বিগুণ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক বলেন, 'উপজেলার পূর্ব পাশের পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে শিম চাষ হয়। বসতবাড়ির আঙ্গিনায়ও পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্য শিম চাষ করা হয়। অনাবাদি জমি চাষের মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য কৃষকদের মাঝে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও চাষাবাদ কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার উপজেলা জুড়ে ৩৪০ হেক্টর জমিতে শিমের আগাম চাষ হয়েছে। এ মাসের মাঝামাঝিতে শিমের চাষ বেড়ে ৩৮০ হেক্টরে দাঁড়াবে। কেজিপ্রতি ২০০ টাকার উপরে শিম বিক্রি হয়। বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমে যায়। তারপরও রোগ ব্যাধির আক্রমণ না হলে অন্য সবজীর তুলনায় লাভ বেশি। তাছাড়া শিমের ফলন আরো যাতে বাড়ে সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'