এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় আলু চাষের মৌসুমে কৃষকদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সারের বাজারে চলছে সিন্ডিকেটের দাপট। কৃষকদের অভিযোগ, সারের ডিলাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারের নির্ধারিত মূল্য ছাড়িয়ে চড়া দামে সার বিক্রি করছে। টিএসপি সারের সংকট এতটাই প্রকট যে অনেক কৃষক দিনের পর দিন ডিলারের কাছে ঘুরেও নির্ধারিত মূল্যে সার পাচ্ছেন না। অথচ ১,৩৫০ টাকার টিএসপি সারের বস্তা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ১,৮০০ থেকে ২,০০০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এবছর বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা, এতে তারা আরো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গোপন অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার কিছু প্রভাবশালী অসাধু ডিলার ও ব্যবসায়ী মজুতকৃত সার লুকিয়ে রেখে সংকট তৈরি করছে। আবার কেউ কেউ সরাসরি গোডাউনে সারের মজুদ রেখেও দাবি করছে যে, সার নেই। মধ্যস্বত্বভোগীরা এই সংকটের সুযোগ নিয়ে বেশি দাম দিয়ে বিক্রির শর্তে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ করছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষকরা অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার মোসলেমগঞ্জ বাজারে কৃষক হাফিজার রহমান আক্ষেপ করে বলেন, “ক্যামেরার সামনে কিছু বললে ডিলাররা আমাকে আর সার দেবে না। নির্ধারিত মূল্যে সার চাইলেও দিতে চায় না, কিন্তু ১৮০০/২০০০ টাকা দিলে তবেই মেলে।”
পৌর এলাকার কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, “আমি ২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করছি। সার, বীজ ও শ্রমিকদের খরচ বেড়ে বিঘাপ্রতি খরচ ৩৫ হাজার টাকার অধিক লাগছে। অথচ টিএসপি সারও পাচ্ছি না, পেলেও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।”
ডিলারদের পক্ষ থেকে পৌর এলাকার সাব-ডিলার আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও আব্দুল গফুর মন্ডল জানান, “কৃষকদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে আমরা নিজেরাও বেশি দামে সার কিনে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। আমরাও সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়।”
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় ১২,৬৫০ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ১২,০০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ২,০০০ হেক্টর বেশি। বিএডিসি ও বিসিআইসির মাধ্যমে সারের বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীদের অসাধু আচরণ ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট, পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। তবে সারের সংকট, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা বিপদে পড়েছেন। সঠিক সময়ে সারের সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে আলু উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলা কৃষি অফিসার অরুণ চন্দ্র রায় জানান, “আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। আশা করছি, নতুন বরাদ্দ এলে সার সংকট কমবে এবং কৃষকরা স্বস্তিতে আলু চাষ করতে পারবেন।”
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিরসনে প্রশাসনের নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান জানান, “কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা আপস করছি না। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কয়েকজন ডিলারকে জরিমানা করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বেশি দামে সার বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসনও সারের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, “সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জেলা পর্যায়ের মনিটরিং টিমগুলো নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করা ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”