কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রূপ নেওয়া অসহযোগ আন্দোলনে গণপ্রতিরোধের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগে সাধারণ জনতার মাঝে শুরু হয় গণ-উল্লাস। সারা দেশে বিশেষ করে রাজধানীতে বিজয় উল্লাস করতে দলে দলে নেমে আসে দেশের সব পেশার সাধারণ মানুষ। এই বিজয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত দেশের তারকারাও।
কেউ কেউ নেমে এসেছেন মাঠে। কেউ বা সামাজিক মাধ্যমে দিচ্ছেন বিজয় বার্তা। এবার ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে কথা বলেছেন ওপার বাংলার নায়িকা ইধিকা পাল। ইধিকার প্রথম চলচ্চিত্র শাকিব খানের সঙ্গে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় নিজের মতামত জানিয়েছেন নায়িকা ইধিকা পাল। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, ঘৃণা সবই উঠে এসেছে তার এই লেখায়।
ইধিকা বলেন, ‘এক রাতের মধ্যে বদলে গেল আমার চেনা বাংলাদেশ! এই বাংলাদেশে গিয়ে শাকিব খানের সঙ্গে ‘প্রিয়তমা’ ছবির শুটিং করেছি? ঈদের দিনে ছবিটা যখন মুক্তি পেল, প্রিমিয়ারে গিয়েছিলাম।
দর্শকদের উন্মাদনা দেখে আনন্দে চোখে জল। বাংলাদেশের হৃদয় এত উষ্ণ! এত ভালবাসা জমে আছে পড়শি দেশের হৃদয়ে! কিন্তু সেই একই হৃদয়ে এত ঘৃণা জমেছিল, টের পাইনি তো! বাংলাদেশের আপ্যায়নের কথা আমার থেকে শুনুন। ইলিশ মাছের রকমারি পদ, ঢাকাই জামদানির কথা সকলের জানা। ওখানে একটি বাড়িতে নিমন্ত্রণ মানে কম করে ১৪ রকমের রান্না। ওজন বাড়িয়ে ফিরেছিলাম ও পার বাংলা থেকে।
তখনও ঘুণাক্ষরে টের পাইনি, আমার চেনা সেই দেশে এত রক্ত ঝরবে। ঝরবে লাখো লোকের চোখের জল।’
আন্দোলন পরবর্তী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ইধিকা বলেন, ‘আন্দোলন এক রকম। গণরোষ অন্য কথা। আরও ন্যক্কারজনক, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্তর্বাস প্রকাশ্যে পুরুষদের হাতে হাতে ফেরা। বাংলাদেশ, এটা তোমার থেকে আশা করিনি। যেমন, আশা করিনি, সমাজের অতি সাধারণ মানুষ কাঁদতে কাঁদতে সর্বস্ব লুটের কথা সামাজিক মাধ্যমে এসে জানাবেন। আমার প্রিয় পড়শি দেশ, তোমার জন্য, দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য মন থেকে প্রার্থনা করছি, আবার সব শান্ত হোক। হাসিতে ঝলমলিয়ে উঠুক সোনার বাংলা। প্রবাহিত হোক, ভালবাসার ফল্গুধারা। যার স্পর্শে হিংসা, ঘৃণার মতো সব কালো ধুয়ে যাবে। জানি, আমার প্রার্থনা সফল হবেই।’
বাংলাদেশে আবারও কাজ করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে ইধিকা বলেন, ‘বাংলাদেশ, তোমায় নিয়ে আমার কোনও নালিশ নেই। সমস্যা নেই, ভয়ও নেই। তুমি ডেকে নিয়ে গিয়ে আমার মাধ্যমে দুই দেশের বিনোদন, সংস্কৃতি, ভাবের আদানপ্রদান ঘটিয়েছ। তাই আবারও তোমার ডাকের অপেক্ষায়। ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে শাকিব খান-সহ আমার অন্যান্য সহ-অভিনেতার নিয়মিত খোঁজ নিতে পারছি না। কিন্তু জানি, বাংলাদেশ চেনা ছন্দে ফিরলেই আমি আবার সে দেশের ছবির নায়িকা হব, সেখানে কাজ করব। কারণ, আমার উপরে তো বাংলাদেশের কোনও রাগ নেই!’