পশ্চিমবঙ্গের আরজি করকাণ্ডের ঘটনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করার এ ঘটনার রেশ পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। একে একে বলিউডের তারকারাও কলকাতার এ ঘটনার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
কিন্তু বলিউড বাদশাহ শারুখান চুপ কেন? কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ অভিনেতার সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। একটা সময় বাংলার প্রচার দূত ছিলেন কিং খান। যখন আরিয়ান খান মাদককাণ্ডে গ্রেফতার হন, সেই সময় বিজেপির ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেছিলেন মমতাও। তাই হয়তো আরজি করকাণ্ডে তিনি নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তবে সরব হয়েছেন শাহরুখকন্যা। বলিউডের অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীর মতো এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী সুহানা খান।
মৃতা চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে আরও সরব হয়েছেন হৃতিক রোশন, আলিয়া ভাট, কারিনা কাপুর, প্রীতি জিনতা, রিচা চড্ডা ও টুইঙ্কল খান্না, আয়ুষ্মান খুরানা, সামান্থা রুথ প্রভুরা। যদিও বলিউডের তিন খানের তরফে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বলিউডের নতুন প্রজন্মের অভিনেতারা ইতোমধ্যে সরব হয়েছেন। সে তালিকায় রয়েছেন অমিতাভ বচ্চনের নাতনি নব্যা নভেলি নন্দা। পিছিয়ে নেই শাহরুখকন্যা সুহানা খানও।
এবার রাজ্যে এমন এক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর সুহানা খান লেখেন, ‘আমরা আরও ভালো কিছুর যোগ্য। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। একজন নারীর সম্মানের অধিকার কেউ যেন লঙ্ঘন করতে না পারে।’
এর আগে অমিতাভ বচ্চনের নাতনি ও সুহানার বন্ধু নব্যা নভেলি নন্দা বলেছেন— ‘আরও একবার ভয়ঙ্কর ধর্ষণের ঘটনা ঘটল। প্রথমত ওই মেয়েটি এবং ওর পরিবারের জন্য প্রার্থনা করি চলুন। আমাদের দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পেছনে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কর্মস্থল, শ্রেণিকক্ষ ও বাড়ি — এই তিনটি জায়গাই তো নিরাপদ আমাদের জন্য। নারীদের ছোট করার মানসিকতার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষকে এক হয়ে লড়তে হবে।’
দেশের একমাত্র নারী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সঠিক বিচারের আশা করেছেন রিচা চড্ডাও। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে অভিনেত্রী রিচা চড্ডা একটি পোস্ট করে লিখেছেন— ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনার থেকে দেশের নারীরা সঠিক এবং নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের আশা করেন। আপনিই দেশের একমাত্র নারী মুখ্যমন্ত্রী।’
সামাজিকমাধ্যমে একটি পোস্টে অভিনেত্রী কারিনা কাপুর দাবি করে বলেছেন— সময় বয়ে যায়। কিন্তু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে কারিনা কাপুর লিখেছেন— ‘১২ বছর পরও একই ঘটনা, একই প্রতিবাদ। কিন্তু আমরা এখনো পরিবর্তনের অপেক্ষা করে চলেছি।’
এদিকে নারীর সুরক্ষার দাবি করে অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা তার পোস্টে লিখেছেন— ‘অর্থনীতিতে সারাবিশ্বে আমাদের দেশ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। আগামী নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছাপিয়ে যাবেন নারীরা— এমনই মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সময় হয়েছে যে, নারীর নিরাপত্তাকেই সবার আগে রাখতে হবে। খারাপ লাগে যখন দেখি, গ্রেফতারের পর একজন ধর্ষকের মুখ ঢাকা থাকে। কিন্তু নির্যাতিতার ছবি ও নাম সব প্রকাশ্যে আনা হয়।’
অভিনেত্রী টুইঙ্কল খান্না বরাবোরর মতোই নিজের স্পষ্ট মতামত দিয়ে আরজি করখাণ্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘পঞ্চাশটা বছর এই পৃথিবীতে, এই দেশে কাটিয়ে ফেললাম। আমি আমার মেয়েকে ঠিক সেগুলোই শেখাচ্ছি, যেগুলো আমিও ছোটবেলায় শিখেছি। একা পার্কে যেও না, স্কুলে যেও না, সমুদ্রের ধারেকাছেও যেও না। একা কোনো পুরুষের সঙ্গে কোথাও যেও না। তিনি যদি তোমার কাকু, ভাইয়ের বন্ধুও হয়, তবুও না। সকাল-সন্ধ্যা কখনো একা কোথাও যেও না। বিশেষ করে রাতে তো একদমই না। কখন যাবে, এটার চেয়েও বড় বিষয় হলো একা যদি তুমি কোথাও যাও, ফিরে না-ও আসতে পারো।’