পরে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি সম্পত্তি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খালের ওপর রেজওয়ানা বন্যার ‘সুরের ধারা’স্থানীয়রা জানায়, ‘সুরের ধারা’ কর্তৃপক্ষ ও ‘সাদিক অ্যাগ্রো’ প্রায় একই সময়ে খাল ভরাট শুরু করে। ১১০ শতাংশ জমি সুরের ধারা দখল করে বর্তমানে ভোগ করছে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ওই জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণে রাজউক থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ।
ছাড়পত্র অনুযায়ী, ভবনটির উচ্চতা সাড়ে সাত হাজার বর্গফুটের ওপরে হওয়ায় এটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ‘বিশেষ প্রকল্প’ হিসেবে এই প্রকল্প রাজউকের বোর্ড সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু জায়গাটি এখন নাল জমি, তাই আইনগতভাবে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিতে রাজউকের কোনো বাধা নেই।
তবে যারা খালকে নাল জমি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারাই বলতে পারবে কিসের ভিত্তিতে নাল জমি ঘোষণা করা হয়েছে।’
জানা গেছে, সিএস/এসএ খতিয়ান নম্বর-১-এর ৬৯২ দাগ, আরএস জরিপের ১ নম্বর খতিয়ানের ১৮৯৫ নম্বর দাগ এবং সিটি জরিপের ১ নম্বর খতিয়ানের ১১৪১২ নম্বর দাগের ওপর নির্মিত হয়েছে সুরের ধারা গানের স্কুলটি। ডিসি অফিস সূত্রে জানা যায়, সিটি জরিপের পর খালের ওই জায়গা নাল হিসেবে দেখানো হয়, যার ফলে সেখানে আর খাল নেই।
স্কুলটির উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে খাল বরাদ্দের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে রাজউককে দ্রুত প্রকল্পটি ছাড় দিতে বলা হয়। এ জন্য ফাইল িট দ্রুত অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করে রাজউক। সরকার পতনের পর সেই ফাইল বর্তমানে আটকে আছে। তবে ঠিকই পরিচালিত হচ্ছে টিনশেডের আধাপাকা গানের স্কুলটি।
সুরের ধারার যাত্রা শুরু ১৯৯২ সালে। প্রথমে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাসায় ছেলেমেয়েদের গান শেখানো হতো। এরপর ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুর-গাবতলী বেড়িবাঁধের পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ আন্ত জেলা ট্রাক সমিতি সরিয়ে দিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রামচন্দ্রপুর ও কাটাসুর মৌজার সরকারি খাসজমি দখল করে আন্ত জেলা ট্রাক সমিতি যেমন বহুতল ভবন করেছিল, তেমনি সুরের ধারা তাদের উত্খাত করে সেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু শুরুতে সফল হয়নি। তবে ২০০৮ সালে ক্ষমতার পালাবদল হলে সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ এই জমি দখলে যায়। বাংলাদেশ আন্ত জেলা ট্রাক সমিতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় তখনকার মন্ত্রী-এমপি ও স্থানীয় কমিশনারের উপস্থিতিতে। এভাবে দখল নেওয়া হয় ৫৫ শতাংশ জমি। এই জমির দখল নিতে উত্তর দিকের বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ ও মাদরাসা কমপ্লেক্সের ভবন ভেঙে কিছুটা অংশ দখল করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ওই মসজিদ আর মাদরাসাও গড়ে ওঠে খাল ভরাট করে। ২০১৭ সালে পুলিশের সহায়তায় সেখানে টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়।
এ বিষয়ে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঢাকা জেলা প্রশাসনকে বলেছিলেন আমাকে একটি জায়গা দেওয়ার জন্য। তখন জেলা প্রশাসন আমাকে এই জায়গাটি দিয়েছিল। এটি নাল জমি। খালকে নাল জমি করে দেওয়ার তো সুযোগ নেই। খাল সেখানে আছে, তবে সেটি আমার স্কুলের পেছনে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আইনগত সব দিক ঠিক রেখে আমাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা রাজউক, জেলা প্রশাসকসহ সব ধরনের জায়গা থেকে অনুমতি পেয়েছি। তবে স্কুলের জন্য যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল, সেটি আটকে গেছে। আমি অসুস্থ, আর বেশি কথা বলতে পারছি না।’