সামরিক জোটের (ন্যাটো) ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কোনো পক্ষ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের জন্য রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এরদোগান বলেন, তুরস্ক ইউক্রেনের অখণ্ডতাকে সমর্থন করে। তবে সামরিক জোটের (ন্যাটো) রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অংশ হওয়া উচিত নয়।
বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আধিপত্য, মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট আর চীনের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতিসহ নানা বিষয়কে সামনে রেখে আজ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর ৭৫তম শীর্ষ সম্মেলন।
৯-১১ জুলাই ন্যাটোর ৩২ সদস্য রাষ্ট্র এই সম্মেলনে যোগ দেবে। এতে সম্মেলনে মূলত ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। তবে ইরানের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে উঠা প্রতিরোধ অক্ষ মোকাবেলার উপায় নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক সহযোগিতার মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে জোটের নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়টি এই ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে মিত্রদের আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কয়েক মাস আগে ন্যাটো জোটের ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। সম্মেলনে ন্যাটোকে একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী জোট হিসেবে দেখানোই উদ্দেশ্য। তবে এমন সময় জোট নেতারা ওয়াশিংটনে জড়ো হচ্ছেন, যখন ইউক্রেন যুদ্ধে হোঁচট খাওয়া এবং আটলান্টিকের উভয় পাশে মধ্য ও উগ্র ডানপন্থীদের উত্থানের ঝড়ও তাদের সঙ্গী হচ্ছে।
সম্মেলনে নজর থাকবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর। তিনি জোটের পক্ষ থেকে দৃঢ় সমর্থনের প্রত্যাশায় থাকলেও এবারও ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। ফলে, জেলেনস্কির আসল উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে না, তবে তিনি খালি হাতে ফিরছেন না এটা নিশ্চিত।
চীনের প্রভাব ঠেকাতে এশিয়ায় ন্যাটোর ক্রমবর্ধমান ভূমিকার গুরুত্ব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাইডেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও অনেক চাপে রয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাইডেনের ওপর চাপ বাড়ছে।
নিয়মিত এজেন্ডার বাইরে ন্যাটো সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু বড় হয়ে উঠতে পারে। ইরানের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ অক্ষের অংশীদার হামাস, হিজবুল্লাহ, হুথি, শিয়া মিলিশিয়াদের মোকাবিলার উপায় নিয়েও আলোচনা হতে পারে। কারণ, সময়ের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোর শক্তি খর্ব হতে শুরু করেছে।
ইরান থেকে শুরু করে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পূর্ব সীমান্ত এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল পর্যন্ত সিরিয়া, লেবানন এবং ইসরাইল এবং দক্ষিণে হর্ন অফ আফ্রিকা, লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে মারাত্মক নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে পশ্চিমারা। এরমধ্যে লোহিত সাগরে পণ্য পরিবহণেও অস্থবিরতা চলছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, লোহিত সাগরের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডান, মিশর, তিউনিসিয়া ও ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরকেও ওয়াশিংটনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।