ভারতবিরোধী ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান তুলে মালদ্বীপের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়েছিলেন মোহাম্মদ মুইজ্জু। জুনে তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এবার চার মাসের মাথায় আবারও ভারত সফরে যাচ্ছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট।
মুইজ্জুর ভারত সফরে দ্বিপক্ষীয় সর্ম্পকে নতুন মেরুকরণের আভাস মিলছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদন এমন ইঙ্গিত দিয়েছে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
গত বছরের নভেম্বরে মুইজ্জু শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেই মালদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত মুইজ্জুকে নিয়ে বরাবরই উদ্বিগ্ন ছিল দিল্লি। এরপর চলতি বছরের মে মাসে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করে মালদ্বীপ৷ এমন আবহে ভারতবিরোধী প্রচারণা ও বিদ্বেষ বাড়তে থাকায় মালদ্বীপ ভ্রমণ কমিয়ে দেন ভারতের পর্যটকেরা।
তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনা কাটিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে মালদ্বীপ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দিল্লিতে পঞ্চম প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংলাপে অংশ নেয় দুই দেশ।
এছাড়া চলতি বছরের ১০ মে ভারতে সফরে যান মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জমির। গত মাসে মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এছাড়া গত ৩০ জুলাই মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়সাল নয়াদিল্লিতে ভারতের পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে বৈঠক করেন।
চলতি বছরের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন মালদ্বীপের দুজন উপমন্ত্রী। ভারতের লাক্ষ্মাদ্বীপে মোদির পর্যটন প্রসারের পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই মন্তব্য করেছিলেন মালদ্বীপের মন্ত্রীরা। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় দুই দেশের মধ্যে।
গবেষণা সংস্থা মন্ত্রয়ার প্রধান শান্থি ম্যারিয়েট ডি সুজার মতে, মালদ্বীপ ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য রেখে এগোতে চাইছে৷
ডি সুজা বলেন, ‘মোদিকে নিয়ে ঠাট্টা করা দুই উপমন্ত্রীর পদত্যাগ বলে দিচ্ছে মুইজ্জু নয়াদিল্লির সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতে চান। তবে এতে চীনের প্রতি তার যে পক্ষপাত, সেটি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে। রিজার্ভের পরিমাণ দ্রতই কমছে। এতে চাপ বাড়ছে সরকারের উপর। বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে ভারত থেকে বড় সহযোগিতা পাচ্ছে মালদ্বীপ। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক পি সাহাদেবন মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে ভারতকে পাশে চায় মালে।
পি সাহাদেবন বলেন, ‘মুইজ্জুর সরকার তার চীনপন্থী অবস্থান পরিবর্তন না করেও ভারতের প্রতি তার অবস্থান নরম করেছে।’
ভারত বিরোধিতার রাজনীতিতে গদিতে বসলেও সরকার চালানো কঠিন দেখছেন মুইজ্জু। তাই প্রয়োজনের সময় সেই ভারতের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে মালদ্বীপকে। ভারত মালদ্বীপের উন্নয়ন সহায়তায় অন্যতম ঋণ দানকারী দেশ। অতীতেও অনেক সময় সহজ শর্তে ভারত মালদ্বীপকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
অভিজ্ঞ কূটনীতিক অনিল ওয়াধওয়া মনে করছেন, মুইজ্জুর আসন্ন সফর তার ‘ইন্ডিয়া আউট’ অবস্থান থেকে সরে আসার একটি সংকেত৷
তার ভাষ্য, ‘মালদ্বীপ বুঝতে পেরেছে যে ভারতই একমাত্র দেশ, যেটি মালদ্বীপের সংকটে দ্রুত সাড়া দিতে পারে। আর্থিক সংকটের সময়ে তাকে উদ্ধার করতে পারে।’