গত বছরের নভেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু তার প্রথম দুটি বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন যথাক্রমে তুরস্ক ও চীনকে।
জানুয়ারিতে তার সেই চীন সফর ভারতের প্রতি এক ধরনের ‘অবজ্ঞা’ হিসেবেই দেখা হয়েছিল – কারণ অতীতে মালদ্বীপের সব নেতাই নির্বাচিত হয়ে সবার আগে ভারতে সফর করেছেন।
প্রায় একই সময়ে মালদ্বীপের একাধিক সরকারি কর্মকর্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করলে সেটি কেন্দ্র করেও তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
ভারতের উপহার দেওয়া দুটি সামরিক হেলিকপ্টার ও একটি ডর্নিয়ার এয়ারক্র্যাফটের ‘রক্ষণাবেক্ষণে’র জন্য যে প্রায় ৮০ জনের মতো ভারতীয় সেনা সদস্য মালদ্বীপে ছিলেন, মুইজ্জু সরকার তাদেরও অবিলম্বে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
পরে অবশ্য ‘সেনা সদস্য’দের পরিবর্তে ভারতের ‘বেসামরিক টেকনিক্যাল কর্মী’দের মালদ্বীপে পাঠিয়ে সেই ইস্যুটির একটি নিষ্পত্তি করা হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের একটি ‘রিসার্চ ভেসেল’ বা গবেষণাধর্মী জাহাজকে মালদ্বীপ তাদের বন্দরে ভিড়ার অনুমতি দেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্তও দিল্লিকে অসন্তুষ্ট করেছিল।
ভারতের ধারণা ছিল সেটি আসলে চীনের একটি গোয়েন্দা জাহাজ এবং তাদের সংগৃহীত ডেটা চীনের সেনাবাহিনীর সাবমেরিন অপারেশনে ব্যবহার করা হবে।
প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু অবশ্য বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন যে তিনি ‘চীন-পন্থী’!
বিবিসিকেও তিনি বলেছেন, ‘যে দিন দায়িত্ব নিয়েছি সে দিনই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি– যে এটা হলো একটা ‘মলডিভস ফার্স্ট’ পলিসি, অর্থাৎ মালদ্বীপের স্বার্থ সবার আগে।’
‘অন্য যেকোনো দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় পারস্পরিক মর্যাদা ও আস্থা, একে অন্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনার নীতি দিয়ে,’ জানান তিনি।
তবে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু মালেকে বেজিংয়ের ঘনিষ্ঠ বলয়ে নিয়ে যেতে অনেক চেষ্টাই করেছেন বলে মনে করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন চীনের কাছ থেকে মালদ্বীপ তেমন একটা অর্থনৈতিক সহযোগিতা পায়নি।
আর সে কারণে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে এখন দিল্লির সাহায্যপ্রার্থী হতে হচ্ছে।
মালে-ভিত্তিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক আজিম জাহিরের কথায়, মালদ্বীপ যে ভারতের ওপর আসলে কত বেশি নির্ভরশীল, মুইজ্জুর এই দিল্লি সফর তারই প্রমাণ।
‘আর ভারতের ওপর এই নির্ভরশীলতা অন্য কোনো দেশকে দিয়ে পূরণ করাটা মোটেও সহজ হবে না,’ বলছিলেন জাহির।