যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। হোয়াইট হাউসে কে যাবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা এখনও করা যাচ্ছে না। জাতীয় পর্যায়ের জরিপ ও নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলো নিয়ে করা জরিপে কারও তেমন এগিয়ে থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। দুই জরিপে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
প্রধান এই দুই প্রার্থীর একজন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। তিনি যে ৫ কারণে জয়ী হতে পারেন, তা তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। যমুনা টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই কারণগুলো।
কমালা ট্রাম্প নন:
ট্রাম্প অনেক দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও তিনি এখনও এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাকে নিয়ে মোটাদাগে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দুই ভাগে বিভক্ত। বলা হয়, ডানপন্থী ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মেরুকরণ বেড়েছে। ২০২০ সালে ট্রাম্প যতো ভোট পেয়েছিলেন, তা ছিল রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে রেকর্ড সর্বোচ্চ। কিন্তু ৭০ লাখের বেশি মার্কিন তার থেকে মুখ ফিরিয়ে বাইডেনকে সমর্থন দেয়ায় ট্রাম্প হেরে যান।
ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে কী হতে পারে, নির্বাচনের প্রচারণায় সেই ভয় দেখিয়েই এবার ভোটার আকর্ষণের চেষ্টা করছেন কমলা। ট্রাম্পকে তিনি একজন ফ্যাসিস্ট ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করছেন। অন্যদিকে ‘নাটকীয়তা ও সংঘাত’ পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কমালা।
গত জুলাইয়ে রয়টার্স/ইপসোসের করা এক জরিপে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, প্রতি পাঁচজন মার্কিনের চারজনই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কমলার আশা, ভোটাররা বিশেষ করে মধ্যপন্থী রিপাবলিকান ও নিরপেক্ষ ভোটাররা তাকে এমন প্রার্থী হিসেবে দেখবেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থিতিশীল পরিবেশ এনে দিতে পারবেন।
কমালা বাইডেনও নন:
এবারও গত নির্বাচনের মতো ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে লড়াই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা বিষয় নিয়ে সমালোচনার মুখে গত জুলাইয়ে বাইডেন ঘোষণা দেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না। বাইডেনের লড়াই থেকে বাদ পড়ার মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটরা এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল, যখন মনে করা হচ্ছিল, আসন্ন নির্বাচনে দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পরাজয় এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।
কিন্তু ট্রাম্পকে পরাজিত করার সম্মিলিত যে বাসনা, সে তাড়না থেকে ডেমোক্র্যাটরা দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়ে কমলার পাশে এসে দাঁড়ান। আচমকা প্রার্থী হওয়ার পরও কমালা হ্যারিস শুরুটা করেন দারুণভাবে। কমলা ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই দলটি যেন গতি ফিরে পায়। কিছুটা মুষড়ে পড়লেও কমলার দূরদর্শী বক্তব্য ডেমোক্র্যাট ঘাঁটিতে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আশাবাদের সঞ্চার করে।
রিপাবলিকানরা বাইডেনের অজনপ্রিয় নীতির সঙ্গে কমলার নাম জুড়ে তার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু বাইডেনকে ঘিরে দলটির অনেক আক্রমণকে নিছক অপ্রয়োজনীয় হিসেবে তুলে ধরেছেন কমলা।
বাইডেনের নির্বাচনী লড়াই থেকে ছিটকে পড়ার অন্যতম একটি কারণ ছিল তার বয়স। জরিপে দেখা গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মতো দায়িত্ব সামলানোর সামর্থ্য প্রবীণ বাইডেনের রয়েছে কি না, এ নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ ছিল। কমালা প্রার্থী হওয়ার পর এখন পাশার দান উল্টে গেছে। এখন ট্রাম্পের বয়স নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। কারণ, নির্বাচিত হলে ট্রাম্প হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট।
নারী অধিকার:
সুপ্রিম কোর্ট নারীদের গর্ভপাতের অধিকারসংক্রান্ত একটি মামলার রায় দেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর নারীদের গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।
নারীদের গর্ভপাতের অধিকার রক্ষা করতে চান এবং এ নিয়ে উদ্বিগ্ন এমন ভোটাররা এবার কমালা হ্যারিসকে সমর্থন দিচ্ছেন। বিগত নির্বাচনেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ ক্ষেত্রে ২০২০ সালে হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলা যেতে পারে। সেই নির্বাচনে গর্ভপাতের বিষয়টি বড় হয়ে উঠেছিল এবং নির্বাচনের ফলাফলে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
এবারের নির্বাচনে প্রায় ১০টি অঙ্গরাজ্যের ব্যালটে গর্ভপাতের বিষয়টি থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম সুইং বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনাও আছে। ব্যালটে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হবে, গর্ভপাতের বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকা উচিত কি না। এতে কমালা হ্যারিসের পক্ষে বেশি ভোট পড়তে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এখনও কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পায়নি। এ কারণেও নারীরা এবার কমলা হ্যারিসকে ভোট দিতে পারেন।
ভোট দেয়ার মানুষ বেশি:
জনমত জরিপে উঠে এসেছে, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে এবং বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের মধ্যে কমালা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা বেশি। আর এসব ভোটারদের মধ্যে এবারের নির্বাচনে ভোট দেয়ার প্রবণতাও বেশি।
ভোটারদের যে অংশে ভোটদানের হার বেশি, সেই অংশে ভালো করেন ডেমোক্র্যাটরা। আর ভোট কম দেন এমন ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন বেশি, যেমন তরুণ ও স্নাতক ডিগ্রি নেই এমন ভোটার।
নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের এক জরিপে দেখা গেছে, গত নির্বাচনে ভোট দেননি—এমন নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প বেশি জনপ্রিয়। ফলে এবার বড় প্রশ্ন, এই ভোটাররা কি এবার ভোট দেবেন?
তহবিল সংগ্রহ বেশি, ব্যয়ও বেশি:
এটা গোপন নয় যে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আর এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন হতে যাচ্ছে চলতি বছর।
কিন্তু অর্থ ব্যয়ের প্রশ্নে কমলা হ্যারিস সবার চেয়ে এগিয়ে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ট্রাম্প তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু কমালা তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন গত জুলাইয়ে প্রার্থী হওয়ার পর। কিন্তু ট্রাম্পের চেয়ে দেড় বছর পর তহবিল সংগ্রহ শুরু করলেও তার চেয়ে বেশি তহবিল তুলেছেন কমালা। অন্যদিকে কমালা হ্যারিস নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞাপনে ট্রাম্পের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যয় করেছেন।
শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী প্রচার চলছে ভোটের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে। শেষ দিকে এসব রাজ্যে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, যা ফলাফলে প্রভাব ফেলবে।