এবারের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার টপ ফাইভ ফাইনালিস্টকে যখন একই প্রশ্ন করা হয়, তখন সবচেয়ে সপ্রতিভ জবাব দিয়েছিলেন ডেনিশ নন্দিনী ভিক্টোরিয়া কিয়ার থেইলভিগ। অভিন্ন প্রশ্নটি ছিল, ‘মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা নানা প্রজন্মের নারীকে অনুপ্রাণিত করেছে। যাঁরা এখন আপনাকে এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে দেখছেন, তাঁদের উদ্দেশে আপনি কী বলতে চান?’ একুশ বসন্তের ভিক্টোরিয়া স্মিত হেসে তাঁর নিপাট জবাবে বললেন, ‘বিশ্বের যে প্রান্ত থেকে আমাকে যাঁরা দেখছেন, তাঁদের প্রতি বিনীত মেসেজ হচ্ছে, আপনি কোত্থেকে এলেন, আপনার অতীত কেমন ছিল, ওটা মূল বিষয় নয়। আপনার টার্গেট হতে হবে সমালোচনাগুলোকে যেন শক্তিতে পরিণত করতে পারেন।
সমালোচনা কখনোই আপনার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারবে না। সুতরাং শেষহীন লড়াইটা আপনাকেই চালিয়ে যেতে হবে। আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কারণ আমি সময়ে নিজেকে পাল্টাতে চেয়েছি, ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছি এবং একই কাজ আমি আজকের রাতেও (১৬ নভেম্বর) অবিরাম করছি।
অতএব, কখনোই আশা হারাবেন না। সব সময় নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখুন। নিজের স্বপ্নটাকে তরতাজা রাখুন। কারণ ওটাই তো করতে চাইছেন।
মেক্সিকোর মাটিতে মিস ইউনিভার্স শিরোপা জেতার মাধ্যমে ভিক্টোরিয়া কিয়ার থেইলভিগ সোজা ঢুকে গেলেন ইতিহাসে। কারণ দেশের হয়ে এটাই প্রথম মিস ইউনিভার্স শিরোপা। দুরন্ত চটপটে নন্দিনী ভিক্টোরিয়া একজন নৃত্যশিল্পী, উদ্যোক্তা এবং ভবিষ্যৎ আইনজীবী। তিনি মেক্সিকো সিটিতে বৈশ্বিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ১২০ জনেরও বেশি প্রতিযোগীকে পরম আস্থায় পেছনে ফেলে সেরার মুকুট নিজের নামে করে নিতে পেরেছেন।
বর্তমান শিরোপাধারী নিকারাগুয়ার শেইনিস প্যালাসিওসের কাছ থেকে মুকুট গ্রহণের সময় ভিক্টোরিয়াকে মঞ্চে উপস্থিত অন্য প্রতিযোগীরাও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় গায়ক রবিন থিক। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ‘সেভড বাই দ্য বেল’ তারকা মারিও লোপেজ এবং সাবেক মিস ইউনিভার্স অলিভিয়া কুলপো।
ডাহা গ্ল্যামারাস এই টান টান প্রতিযোগিতা শুরু হয় বৃহস্পতিবারের প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে, যেখানে টিকে যান ৩০ জন স্মার্ট প্রতিযোগী। এই পর্বে ছিল জাঁকজমকপূর্ণ জাতীয় পোশাক প্রদর্শনী। সেমিফাইনালে নির্বাচিত প্রতিযোগীরা সাঁতারের পোশাকে প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এরপর ১২ জন এগিয়ে যান সন্ধ্যার গাউন প্রতিযোগিতায়। শীর্ষ পাঁচ প্রতিযোগীর মধ্যে চূড়ান্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে নেতৃত্ব ও মানসিক দৃঢ়তার মতো বিষয় উঠে আসে। যখন ভিক্টোরিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘কেউ যদি আপনাকে বিচার না করে তাহলে আপনি কিভাবে জীবন যাপন করতেন?’ তাঁর জীবনসঞ্চারী জবাব ছিল, ‘আমি আমার জীবন প্রতিদিনের মতোই কাটাতাম নিপাট ভালোবাসায়, আস্থায় আর একবুক সজীব বিশ্বাসে।’
নাইজেরিয়ার চিদিম্মা আদেতশিনা প্রথম রানার আপ এবং মেক্সিকোর মারিয়া ফার্নান্ডা বেলট্রান দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত হন। থাইল্যান্ডের সুচাতা চুয়াংস্রি এবং ভেনিজুয়েলার ইলিয়ানা মার্কেজ পেদ্রোজা পরবর্তী স্থান দখল করেন। পেদ্রোজাও ইতিহাসের অংশ। কারণ ২৮ বছর বয়সী এই প্রতিযোগী একজন মা আর শীর্ষ পাঁচে পৌঁছে তিনি প্রতিযোগিতার ইতিহাসে নজির গড়েন।
চলতি বছর মিস ইউনিভার্সের ৭২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২৮ বছরের বেশি বয়সী প্রতিযোগীদের অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। দুই ডজনেরও বেশি প্রতিযোগী আগের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ফাইনালে পৌঁছেন। এখানে আরেক অদম্য নারীকে বিবেচনায় আনতেই হয়। তিনি হলেন মাল্টার বিট্রিস এনজোয়া, যিনি ৪০ বছর বয়সেও প্রথম এবং একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে গ্র্যান্ড ফাইনালে অংশ নেন। এবারের প্রতিযোগিতার আরেক বিশেষত্ব হচ্ছে, ২০২৩ সালের প্রতিযোগিতার আগে মিস ইউনিভার্স সংগঠন গর্ভবতী বা মা হওয়া নারীদের এবং বিয়ে করেছেন এমন নারীদের অংশগ্রহণের নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
এ বছরের প্রতিযোগিতার আরেক আলোচিত দিক হচ্ছে, কিউবা প্রায় ৫০ বছর পরে এতে অংশ নেয়। এর পাশাপাশি বেলারুশ, ইরিত্রিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এই প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়।
উল্লেখ্য, মিস ওয়ার্ল্ডে মেধা ও সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর মিস ইউনিভার্সে দৈহিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মেধা ও দক্ষতা দেখে নির্বাচন করা হয়। মিস ইউনিভার্সে মডেলিং ও অভিনয় দক্ষতা এবং নিজের দেশের ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় জিতে সেরার আসরে আসতে হয়। অবশ্য নারীবাদীরা মনে করেন, এ ধরনের প্রতিযোগিতা আসলে শুধু নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিচার করে, এই মাপকাঠি যাঁরা উতরাতে পারেন না, তাঁরা হীনম্মন্যতায় ভোগেন। আর যাঁরা সেই মাপকাঠিতে পৌঁছতে চান, তাঁরা সেটা করতে গিয়ে সময় ও অর্থ দুটিই খরচ করেন, যা প্রকারান্তরে বিভিন্ন কম্পানির ব্যবসা বাড়াতে সহায়তা করে। তবে সুন্দরী প্রতিযোগিতার পক্ষের মানুষরা একে দেখেন নারীর ক্ষমতায়নের একটি মাধ্যম হিসেবে। বিশেষ করে বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় মেয়েদের মেধা, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যতাও বিবেচনায় আনা হচ্ছে, যা ইতিবাচক হিসেবে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের কেউ কেউ এটাও মনে করছেন, এ ধরনের প্রতিযোগিতা নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসছে, তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।