ঢাকা
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:৩০
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪

দেশের ৮০ শতাংশ রোগীর ভরসা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট

অসংক্রামক রোগের অন্যতম হৃদরোগ। দেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় উন্নতি হলেও এখনো রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল দেশের রোগীদের একমাত্র ভরসা। যেখানে দেশের ৮০ভাগ রোগীর চিকিৎসা হয়ে থাকে। ঢাকার বাইরে সরকারিভাবে শুধুমাত্র একটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বেসরকারিভাবে চারটি হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারির ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে সঠিক সময়ে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা না পাওয়াসহ নানা কারণে প্রতি বছর পৌনে ৩ লাখ (২ লাখ ৭৩ হাজার) মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে হৃদরোগের বিশ্বমানের সেবা রয়েছে। কিন্তু সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে ঢাকাকেন্দ্রিক। যার সামর্থ্য আছে, সে চিকিত্সা নিতে পারছে। যার সামর্থ্য নেই, সে নিতে পারছে না। দেশে যে চিকিৎসা আছে, সেখানে এনজিওগ্রাম, রিং পরানো, বাইপাস সার্জারি সবই শহরকেন্দ্রিক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেগুলোর সুযোগ-সুবিধা নেই।

সারা দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর অস্বাভাবিক চাপ থাকে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে। শনিবার রাজধানীর শ্যামলী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সেই চিত্র দেখা যায়। শিশু কার্ডিয়াক ওয়ার্ড-২-এর বি-৭ নম্বর বিছানায় মায়ের পায়ের ওপরে শুয়ে আছে ছয় মাস বয়সী শিশু আয়ান। মা আসকিনার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আয়ানের জন্মের দুই মাস পরেই তারা জানতে পারেন, ছেলের হার্টে ছিদ্র রয়েছে। ওষুধ চলছিল। মা আসকিনা বলেন, চিকিৎসক জানিয়েছে আয়ানের বয়স এক থেকে দেড় বছর হলে হার্টে অপারেশন করাতে হবে। তিনি বলেন, গত শনিবার আমরা কুমিল্লা থেকে এসে এই হাসপাতালে ভর্তি হই। তখন ছেলের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। হঠাৎ জ্বর আর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আমরা বাচ্চাকে নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যালে যাই, সেখানকার ডাক্তাররা আমাদের ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আইসিইউতে তিন দিন রাখার পর আয়ান এখন কিছুটা ভালো। শনিবার আয়ানের হাসপাতাল ছাড়ার কথা রয়েছে বলে জানান তার মা।

শিশু ওয়ার্ডের বি-৬ নম্বর বেডের শুয়ে ঘুমাচ্ছিল শিশু মো. মিজানুর রহমান। শিশুরটির সঙ্গে থাকা মা নীলিমা বেগম বলেন, আমরা ময়মানসিংহের কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছি। আমার তৃতীয় সন্তান মিজানুরের বয়স-২৭ দিন। মা নীলিমা বলেন, আমার বাচ্চার হার্টের সমস্যা তেমন নাই, কিন্তু তার বুকে কফ জমে গিয়েছিল। নিউমোনিয়া নিয়ে পাঁচ দিন আগে বাচ্চাকে ভর্তি করাই এই হাসপাতালে। এখন কিছুটা ভালো।

আবু ফাইজার বয়স ১০ মাস। শিশু ওয়ার্ডের বি-৫ নম্বর বিছানায় শুয়ে আছে সে। চোখেমুখে কিছুটা বিরক্তি ভাব। সঙ্গে থাকা মা মৌসুমি বেগম জানান, জন্মের আট দিন বয়সে পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান ফাইজার হার্টে ছিদ্র আছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ওর হার্টের অপারেশন করানো লাগবে। তারা এসেছেন কুষ্টিয়া থেকে। মা মৌসুমি বলেন, গত পাঁচ দিন আমার বাচ্চা আইসিইউতে ছিল। ওর ব্রেইনে ও ফুসফুসে সমস্যা আছে। শিশুটির বাবা মো. শান্ত হোসেন কৃষিকাজ করেন। জানান, জন্মের পর দুই বার তার ইকো করানো হয়েছে। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ব্রেইনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে।

শিশুদের ওয়ার্ডেই বি-১ বিছানায় কথা হয় রাশেদা বেগমের সঙ্গে। তার বয়স ১৮ বছর বলে জানান। রাশেদার বাড়ি নীলফামারি জলঢাকা। রাশেদা বলেন, হার্টের সমস্যা রয়েছে তার। হাঁটলে বুক ধরফর করে, চাপা ব্যথা লাগে। শ্বাসকষ্ট হয়, শরীর ঝাকি দিয়ে উঠে। কয়েক দিন নাক দিয়ে রক্তও পড়েছে। এখন ডাক্তার বলেছে অপারেশন লাগবে। সামনের মাসে অপারেশন হবে। রাশেদার বাবা রবিউল রাজমিস্ত্রির কাজ করেন আর মা আমিনা গৃহকর্মের কাজ করেন।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিউট হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ১ হাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে ৯৫ হাজার ২৪ জন ও বহির্বিভাগে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৬ রোগী চিকিৎসা নেন। ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে জরুরি বিভাগে ১ লাখ ১৫ হাজার একজন এবং বহির্বিভাগে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৯৯ জন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রোগী আরও বেড়ে জরুরি বিভাগে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০৩ জন এবং বহির্বিভাগে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৮ জন। গত বছরের বছরে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত জরুরি বিভাগে ৯৬ হাজার ৯৭ জন, বহির্বিভাগে ১ লাখ ৩২ হাজার ৪১৩ চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া এসময় অন্তঃবিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৬৩ হাজার ৬১১ জন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৫১১ জন হৃদরোগী।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ঢাকার বাইরে হৃদরোগের চিকিৎসা আছে, তবে রোগীদের চাহিদা অনুপাতে কম। দিন শেষে রোগীরা ঢাকাতেই আসছেন। ১ হাজার ২৫০ শয্যার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ রোগী ভর্তি থাকছেন। প্রায় সমানসংখ্যক রোগী প্রতিদিন হাসপাতালটির জরুরি ও বহির্বিভাগে ভিড় করছেন। ঢাকার বাইরে কার্ডিওলোজি চিকিৎসা আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় এমনটা হচ্ছে।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বলেন, একটা ইনস্টিটিউটের ভরসা করলে কোনো দিনও হার্টের চিকিৎসার উন্নতি সম্ভব নয়। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে সব সময় ভিড় ছিল, এখনো হচ্ছে। এর কারণ রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, বরিশাল, খুলনায় জনবল এবং সরঞ্জাম কমবেশি থাকলেও সার্জারি চিকিত্সা হচ্ছে না। এই রোগীদের দ্রুত সুচিকিত্সা নিশ্চিত করতে হলে ঢাকার পাশাপাশি বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে হার্টের উন্নত সরকারি-বেসরকারি চিকিত্সাসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

এদিকে সারা বিশ্বের মতো আজ ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস-২০২৪। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ইয়েস, ইউজ হার্ট ফর অ্যাকশন অর্থাত্ ‘হূদয় দিয়ে হূদেরাগ প্রতিরোধের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে’। প্রতিপাদ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে হূদ্যন্ত্রের যত্ন ও হূদ্যন্ত্রের সক্ষমতা বাড়নোর আহ্বান করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে আলোচনাসভা, শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হবে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram