বছর ছয়েক আগের কথা। সাইফ পাওয়ারটেক কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন দেশের প্রত্যেকটি জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে দুই লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, বাফুফে সভাপতি হওয়ার। কিন্তু তার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। অনিবার্য বাস্তবতায় ফুটবল থেকে এরপর গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। সেই তরফদার যখন পুনরায় বাফুফে সভাপতি হওয়ার লড়াইয়ে অবতীর্ণ, দেশের সব পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠক ও আসন্ন বাফুফে নির্বাচনের কাউন্সিলরদের বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
তাদের বক্তব্য, ‘লোকটি যেভাবে শুরু করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতা রাখতে পারেন নি। তাকে বিশ্বাস করা যায় না, আস্থা রাখার উপলক্ষ সৃষ্টি হয় না।’
এদিকে তরফদার রুহুল আমিনের ওপর যখন বেশিরভাগ ক্রীড়া সংগঠক ও কাউন্সিলররা ভরসা করতে পারছেন না, ঠিক তখন জোর লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছেন ইমরুল হাসান ও তাবিথ আউয়াল।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে যখন কাজী সালাউদ্দিন আগামী নির্বাচনে আর সভাপতির পদে দাঁড়াবেন না বলে ঘোষণা করেন, ঠিক তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ তারকা একটি হোটেলকে ভেন্যু করে বিএনপি নেতা ও সাবেক গোলরক্ষক গ্রেট আমিনুল হকের প্রকাশ্য উপস্থিতি ও সমর্থনে তরফদার রুহুল আমিন ২৬ অক্টোবর বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়ে দেন।
অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের অনিবার্য বাস্তবতায় ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি তাবিথ আওয়ালও সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন। বিএনপির এই নেতা মনে করেছেন, আগামীতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে তার দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে, তাই তিনি অনেকের কাছেই স্বয়ংক্রিয় পছন্দ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু গেল নির্বাচনে তিনি সহ সভাপতির পদে নির্বাচন করে হেরে যান। তাই, প্রশ্ন রয়েছে তার ম্যাচিউরিটি ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে।
অপরদিকে ফুটবলের স্বার্থ বিবেচনায় বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ও ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান এর ওপর ভরসা রাখতে চায় দেশের ফুটবল সংগঠকেরা, এমন খবর শোনা আছে। পেশাদারিত্বের প্রশ্নে, দায়বদ্ধতার প্রশ্নে ইমরুল হাসানের ওপর ভরসা রাখার সুযোগ আছে বলে মনে করেন বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠকরা। গেল ২৪ অক্টোবর বসুন্ধরা ফুটবল একাডেমি করার ঘোষণাও রেখেছেন ফুটবলের এই ব্যক্তিত্ব। বসুন্ধরা ফুটবল স্টেডিয়াম করা, ক্লাব ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের এশিয়ায় সাফল্য পাওয়া ইমরুলকে জাতের সংগঠক হিসাবে দাঁড় করায়।
অভিযোগ আছে, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের সাবেক হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সাবেক চাসিক মেয়র আ জ ম নাসির, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক সাংসক কয়েস চৌধুরী ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে সখ্যতা ছিল তরফদার রুহুল আমিনের। তবে তরফদার রুহুল আমিন সবকিছু স্বাভাবিক করে দেখছেন এই কারণে যে, তার ব্যবসায়িক উত্থান একদা হয়েছিল বিএনপি নেতা সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী প্রয়াত কর্নেল (অবঃ) আকবর এর হাত ধরে!
আগামী ২৬ অক্টোবর ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন। নতুন মাসের শুরু থেকেই উত্তাপ বাড়বে। তরফদার নির্বাচনের রেস থেকে সরে যেতে পারেন, এমন সম্ভাবনা বাড়ছে। বিগত সরকারের সুবিধা নেয়া ব্যক্তিসত্তাকে সমর্থন করবে না সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, এমন খবর এখন ক্রীড়াঙ্গনে। এ বিবেচনায় বাফুফের নতুন সভাপতি হওয়ার মূল লড়াইটা হবে তাবিথ আউয়াল ও ইমরুল হাসানের মধ্যেই।