সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মত জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। ১৯৯০ সাল থেকে শারজাহর মাঠে ৬টি ওয়ানডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি খেললেও কখন জিততে পারেনি টাইগাররা। অবশেষে আফগানদের বিপক্ষে শারজাহর মাঠে জয় সূচনা করলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
ব্যাটার-বোলারদের নৈপুন্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানদের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা। এই জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করছে। সমতা ফিরিয়ে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাও ধরে রেখেছে শান্তর দল।
দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৮ রানের বড় ব্যবধানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রথম ওয়ানডে ৯২ রানে জিতেছিল আফগানিস্তান।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। ইনিংসের প্রথম তিন ওভারে ৩টি চার মারেন তিনি। চতুর্থ ওভারে আগের ম্যাচের হিরো আফগানিস্তানের আল্লাহ গজানফারের প্রথম ডেলিভারিতে ছক্কা মারেন তানজিদ। কিন্তু পরের বলে মিড অনে মোহাম্মদ নবিকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১৭ বলে ২২ রান করা এই বাঁ-হাতি ওপেনার।
দলীয় ২৮ রানে তানজিদ ফেরার পর বাংলাদেশের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক শান্ত। নবম ওভারের দলের রান ৫০এ নিতে পারলেও, তিন অঙ্কের খুব কাছে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। দলীয় ৯৯ রানে স্পিনার রশিদ খানের বলে লেগ বিফোর আউট হন সৌম্য। রিভিউ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও, নেননি তিনি। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, রশিদের ডেলিভারি লেগ স্টাম্পের লাইনের বাইরে পিচ করেছিলো। অর্থাৎ রিভিউ নিলে উইকেট বাঁচাতে পারতেন সৌম্য। ২টি করে চার-ছক্কায় ৪৯ বলে ৩৫ রান করেন তিনি। শান্তর সাথে জুটিতে ৯৩ বলে ৭১ রান যোগ করেন সৌম্য।
সৌম্যর পর তৃতীয় উইকেটে মেহেদি হাসান মিরাজের সাথেও হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন শান্ত। এই জুটিতেই ৪৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবম ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ৭৫ বল খেলা টাইগার দলনেতা।
শান্তর হাফ-সেঞ্চুরির পর ব্যক্তিগত ২২ রানে রশিদের গুগলিতে বোল্ড হন মিরাজ। পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। বাঁ-হাতি স্পিনার নাঙ্গোলিয়া খারোতের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে সেদিকুল্লাহ আতালকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৬ বলে ১১ রান করেন হৃদয়।
হৃদয়কে শিকারের পর বাংলাদেশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন খারোতে। ইনিংসের ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শান্তকে ও পঞ্চম বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে আউট করেন খারোতে। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দেন শান্ত-মাহমুদুল্লাহ। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১৯ বলে ৭৬ রান করেন শান্ত। ৯ বলে ৩ রান তুলে থামেন মাহমুদুল্লাহ।
৪১তম ওভারে দলীয় ১৮৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বড় সংগ্রহের পথে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। কিন্তু সপ্তম উইকেটে উইকেটরক্ষক জাকের ও নাসুমের ৪১ বলে ৪৬ রানের জুটিতে লড়াকু সংগ্রহের পথ পায় বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকির করা ৪৭তম ওভারে জাকেরের দুই ছক্কা ও নাসুমের এক চারে ১৮ রান পায় বাংলাদেশ।
১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ২৫ রান করে গজানফারের বলে নাসুম বোল্ড হলেও ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে ২৫২ রানের পুঁজি এনে দেন জাকের। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ বলে অনবদ্য ৩৭ রান করেন জাকের।
আফগানিস্তানের খারোতে ২৮ রানে ৩টি, গজানফার ও রশিদ ২টি উইকেট নেন।
২৫৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। পেসার তাসকিন আহমেদের বলে প্রথম স্লিপে সৌম্যর দারুণ ক্যাচে ২ রানে বিদায় নেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ।
দ্বিতীয় উইকেটে ৭৬ বলে ৫২ রানের জুটিতে আফগানিস্তানকে ভালো অবস্থায় নেন আরেক ওপেনার সেদিকুল্লাহ আতাল ও রহমত শাহ। অবশ্য দশম ওভারে মিরাজের পঞ্চম বলে রহমত শাহর ক্যাচ ছাড়ার পাশাপাশি স্টাম্পিংও মিস করেন জাকের। ১১ রানে জীবন পান রহমত।
১৭তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দেন স্পিনার নাসুম। স্কয়ার লেগে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে আতালকে ৩৯ রানে বিদায় দেন মিরাজ।
তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদিকে নিয়ে দলের ৪৮ রানের জুটিতে দলের রান ১শ পার করেন রহমত। এই জুটিতে একবার করে জীবন পান দুই ব্যাটার।
সাবধানে খেলতে থাকা শাহিদিকে ১৭ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ৪০ বলে ১৭ রান করেন শাহিদি।
৩০তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ওভারের দ্বিতীয় বলে আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেন নাসুম। গোল্ডেন ডাক মারেন ওমারজাই। ওভারের পঞ্চম বলে রান আউটের ফাঁদে পড়েন রহমত। ৫টি চারে ৫২ রান করেন তিনি।
৬ বলে ১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ১১৯ রানে ৫ উইকেট পতনের পর ৪১ বলে ৪৪ রানের জুটিতে আফগানদের লড়াইয়ে ফেরান গুলবাদিন নাইব ও নবি। কিন্তু ৬ বল ও ২ রানের মধ্যে নাইব ও নবিকে হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে আফগানরা। নাইবকে ২৬ রানে শরিফুল ও নবিকে ১৭ রানে আউট করেন মিরাজ।
১৬৫ রানে সপ্তম উইকেট হারানোর পর আর ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনি আফগানিস্তান। ৪৩ দশমিক ৩ ওভারে ১৮৪ রানে অলআউট হয় আফগানরা।
বাংলাদেশের পক্ষে নাসুম ২৮ রানে ৩টি, মিরাজ ও মুস্তাফিজ ২টি করে উইকেট নেন।
আগামী ১১ নভেম্বর একই ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।