লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুমন খানের বাসাতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে সেখান থেকে অজ্ঞাত ৬ জনের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল বাসার চার তলার একটি কক্ষ থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে। সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে মরদেহগুলো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বলে দাবি করছেন নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের পরিবার।
গতকাল শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজপথে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীসহ আমজনতা। দুপুরের পরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের খবরে উল্লাস করেন ছাত্র জনতা। মিষ্টি বিতরণের হিড়িক পড়ে যায় জেলা জুড়ে। এ সময় গোটা জেলায় বিজয় মিছিল বের করেন তারা। সেই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সব সংসদ সদস্য ও নেতাদের বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন দুর্বৃত্তরা।
এছাড়াও পাটগ্রামে ও হাতীবান্ধায় আওয়ামী লীগ অফিস ও নেতাদের বাসা, লালমনিরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের বাসা, লালমনিরহাট ৩ (সদর) আসনের ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের বাসা, যুগ্ম সম্পাদক সাখওয়াত হোসেন সুমন খানের বাসা ও সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি বিলাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। বিকেলের দিকে বাড়িটি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে সেসময় বাড়িতে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার পরিবারের কেউ ছিলেন না।
এদিকে, গতকাল শহরের মিশনমোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়া ৬ শিক্ষার্থী বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে জানা গেছে। আন্দোলন শেষে মিশনমোড় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি থানা রোডের শহীদ মিনার এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু দুর্বৃত্তরা বাড়িটিতে আগুন দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
নিখোঁজদের পরিবার সেনাসদস্যদের সহায়তায় রাতে বাড়িটিতে গিয়ে মরদেহগুলো দেখতে পায়। পরিবারের ধারণা, মরদেহগুলো তাদের নিখোঁজ সন্তানদের হতে পারে।
৬ শিক্ষার্থীর পরিবারের মধ্যে রাজিবুল করিম সরকারের বাবা রেজাউল করিম বলেন, রাত থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খানের বাড়ির নিচে ছিলাম। পুড়ে যাওয়া দেহ ও কাপড়, জুতাসহ অনেক কিছু দেখে আমার ছেলেকে চিনতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, টয়লেটের ভেতরে ৬ জনকে সম্ভবত আগেই আটকে রাখা হয়েছিল। পরে অগ্নিকাণ্ডে তারা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এভাবে আমাদের সন্তানকে মেরে ফেলা হচ্ছে এই বিচার কার কাছে চাইব। আমরা এই হত্যাকাণ্ড চাই না, আমাদের সন্তান ও শান্তি ফিরিয়ে দিন।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ওমর ফারুককে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার শহিদুর রহমান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে শোনার পরেই সুমন খানের বাসা থেকে ছয়জনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো লালমনিহাট সদর থানায় জমা দেয়া হয়েছে। তারা ডিএনএ টেস্ট করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করবে।