মো. এমরান হোসেন, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাহিরে থাকা বিএনপি-জামায়াত চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ফের চাঙা হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে মাঠে ময়দানে বিজয় ও শান্তি মিছিল-সভা করে যাচ্ছেন ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপি-অঙ্গসংগঠন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ। কারাগারে থাকা দলগুলোর অনেক নেতা-কর্মী ইতিমধ্যে মুক্তি লাভ করায় তাদের আনন্দ বেড়েছে বহু গুণে।
ফটিকছড়ি বিএনপি দীর্ঘ সময়ে মাঠে ময়দানে সরাসরি তাদের কর্মসূচী পালন করলেও জামায়াতকে তেমন একটা সরাসরি কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়নি। তাদের মতে, তখনকার সরকারী দলের মামলা-হামলার ভয়ে তারা কৌশলে কর্মসূচী পালন করেছেন। আ.লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হবার পরের দিন সদরে ফটিকছড়ি জামায়াত-শিবির বিশাল এক মিছিল করে তাদের শক্তি প্রদর্শন করেন। এসময় তাদের মনে উচ্ছ্বসিত উৎফুল্ল দেখা গেছে। এছাড়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ফটিকছড়ি সদরে ৯আগস্ট এক শান্তি ও সম্প্রীতি র্যালী শেষে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কর্ণেল আজিম উল্লাহ বাহার। এ সময় তিনি শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।
আ.লীগ সরকার ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচূত হবার দিন বিকেলে ফটিকছড়ির ছাত্র জনতার মাঝে এসে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব সরোয়ার আলমগীর। এর পরের দিন তিনি উপজেলার বিভিন্ন মন্দির পরির্দশন করে মন্দির পাহারায় দেয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় ফটিকছড়ি জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে (বাবুনগর মাদ্রাসা) হেফাজতে আমির কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সাথে দেখা করেন।
এসময় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দেশের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান। পরের দিন ৭আগস্ট সরওয়ার আলমগীর ফটিকছড়ি সদরে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিনীয় হবার আহবান জানান। সর্বশেষ ০৯ আগস্ট আ.লীগের ঘাটি হিসেবে খ্যাত দক্ষিণ ফটিকছড়ির নানুপুর বাজারে এক বিজয় ও শান্তি মিছিল অংশ নিয়ে পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন সরওয়ার আলমগীর।
তিনি বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এদেশে সংখ্যা লঘু বলতে কিছু নাই। আমরা সবাই বাংলাদেশী। তাই মন্দীর ও মাজার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এসব রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আ'লীগ রাজনৈতিক ভাবে মামলা দিয়ে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানী করেছে। আমরা সেই পথে যাব না। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করবো না। সবাইকে নিয়ে এ দেশ গড়বো। তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিনয়ী হবার আহবান জানান।
জানা গেছে, ২০০৬ সালের ২৮অক্টোবর ক্ষমতার লাগাম ছুটে যাওয়ার পর থেকেই দেড় যুগ পার করেছে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে। রাজনীতির মাঠের কঠিন মিত্র বিএনপি-জামায়াত ও তাদের জোটসঙ্গীরা স্বাধীনভাবে করতে পারেনি কোনো সাংগঠনিক সভা ও সমাবেশ। শত চেষ্টায় বিপদ কাটাতে না পারলেও এবার আকস্মিক এক গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে দীর্ঘদিনের দুই মিত্রকে ক্ষমতার কাছাকাছি এনে দিয়েছে দেশের ছাত্র-জনতা।