মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: ঘোড়ার হাল দিয়ে অন্যের জমি চাষ করে এক যুগের বেশি সময় ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন আসছেন মিজানুর। গরু-মহিষ দিয়ে জমি চাষের দৃশ্য স্বাভাবিক। কিন্তু গরু-মহিষের জায়গায় যদি জুড়ে দেওয়া হয় ঘোড়া, তবে তা ব্যতিক্রমীই বটে। অবশ্য এখন সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষাবাদেও এসেছে পরিবর্তন। এখন পশু দিয়ে চাষ না করে যান্ত্রিক নানা প্রযুক্তির সাহায্যে চাষ করে থাকেন কৃষকরা। কিন্তু ভিন্ন চিত্রের দেখা মিলে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের উত্তর ভগবতিপুর গ্রামে। সেখানে ঘোড়া দিয়ে চাষাবাদ করেন মিজানুর রহমান।
রবিবার (১৮ আগষ্ট) সরেজমিনে গিয়ে উত্তর ভগবতিপুর গ্রামে মিজানুরকে ঘোড়া দিয়ে কৃষিজমি চাষ করতে দেখা গেছে। তিনি ঘোড়া লালন-পালন করেন এবং ঘোড়াকেই তার আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি বছরের কিছু সময় ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালপত্র আনা-নেওয়ার কাজ করেন। আবার বোরো ও আমন মৌসুমে অন্যের জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ করার জন্য জমি সমান করতে ঘোড়া দিয়ে মই দেন। ঘোড়া দিয়ে মই দিলে পাঁচ শতক জমিতে ১০০-১৫০ টাকা এবং জমি চাষ দিলে প্রতি বিঘা জমির জন্য ৫০০-৭০০ টাকা পান তিনি। এতে তার বাড়তি আয় হয়। এভাবেই ডিজিটাল যুগেও ঘোড়া দিয়ে অন্যের জমিতে হাল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন মিজানুর রহমান (৫০)। মিজানুর রহমান বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের ভগবতিপুর গ্রামের মৃত আরিফ উদ্দিনের ছেলে।
মিজানুর রহমান নিজের কিছু জমি আবাদের পাশাপাশি অন্যের জমি চাষ করেন টাকার বিনিময়ে। ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে একসময় মাল পরিবহন করতেন। পরে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ শুরু করেন। অভাবের সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস দুটি ঘোড়ার একটি হাল, এ দিয়েই তিনি ঘোরাচ্ছেন সংসারের চাকা। ঘরে আছে স্ত্রী আর এক মেয়ে।
মিজানুর রহমান বলেন, বাপ দাদার সময়ে মহিষের ও গরুর হালের বলদ দিয়ে জমি চাষাবাদ করা হতো। বর্তমানে এক জোড়া হালের বলদের দাম প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা। এতো টাকার হালের বলদ দিয়ে জমি চাষাবাদ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই প্রথমে শখ করে একটি ঘোড়া কিনি। পরে ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করে মালামাল পরিবহন শুরু করি। চিন্তা করলাম ঘোড়া দিয়ে যদি গাড়ি চালানো যায়, তবে হাল চাষও করা যাবে। এই ভেবে পরে আরও একটি ঘোড়া কিনে প্রশিক্ষণ দিয়ে জমি চাষ শুরু করি। এখন বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩ বিঘা জমি চাষ করতে পারি। এতে আমার আয় হয় দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। জমিতে হাল চাষ বা মই দিয়ে প্রতিদিন যা পাই তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। ঘোড়া দুটির খাবার খরচ হয় দৈনিক ২৫০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি চাষে মাটির উর্বরতা বাড়ে। জমি বেশি খনন হওয়ায় জমি ভালো চাষ হয়। ইরি-বোরো মৌসুমে চাহিদা আরও বেড়ে যায়। এলাকার অনেক কৃষক এখন পাওয়ার টিলার বাদ দিয়ে আমার ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি চাষ করেন।
শাহিনুর ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, এলাকায় তো গরুর হাল নেই। পাওয়ার টিলার ডেকে সময়মতো পাওয়া যায় না। তাই কম খরচে মিজানুর রহমানের ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি ভালোই চাষ হয়। তুলনামূলকভাবে পাওয়ার টিলারের চেয়ে ঘোড়ার হালের চাষ ভালো হয়। এলাকার অনেক কৃষক এখন মিজানুরের ঘোড়ার হাল দিয়েই জমি চাষ করেন।
ভুট্টু নামে আরেক কৃষক বলেন, ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করা এই প্রথম সচক্ষে দেখলাম। অবাক হয়েছি, খুব অল্প সময়ে এক বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব ঘোড়ার হাল দিয়ে। গরু বা মহিষের হাল দিয়ে যেটা অসম্ভব। তা ছাড়া ঘোড়ার হালে খনন বেশি হওয়ার জমি ভালো চাষ হয়। এতে জমির উর্বরতা বাড়ে, পাশাপাশি ফলনও ভালো হয়।
বিরামপুর কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গরুর হালের পরিবর্তে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করতে দেখা যাচ্ছে। তবে কৃষকরা দলবদ্ধভাবে অথবা ব্যক্তিগতভাবে যান্ত্রিক প্রকল্পের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি চাষ যন্ত্রপাতি ক্রয় করে দ্রুত সময়ে অল্প খরচে অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারবে।