একে মিলন, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: দুষ্টের দমন ও মানব কল্যাণের শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর পূর্বে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ (১৪৩১ বঙ্গাব্দ) এই ধরাদামে আবির্ভাব করেছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথি শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সুনামগঞ্জে তিনটি গ্রুপে শিশুদের চিত্রাংঙ্গন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সকাল ১১টায় সুনামগঞ্জ জেলা শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী পরিষদ ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাষ ট্রাস্ট ধর্মবিষয়ক মন্ত্রনালয় জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের যৌথ সহযোগিতায় শহরের কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী কালিবাড়ি নাট মন্দির প্রাঙ্গনে চিত্রাংঙ্গন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনশতাধিক শিশু শিক্ষার্থীরা চিত্রাংঙ্গন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন। এদের মধ্যে তিনটি গ্রুপে ৩জন করে মোট ৯জন শিক্ষার্খী বিজয়ী হন।
শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট রাধা কান্ত সূত্রধরের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মণি কাঞ্চন দাস ও মিঠুন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার এম এন মোর্শেদ, সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক বিমল বণিক, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট বিমান কান্তি রায়, সাবেক মহিলা পৌর কাউন্সিলর কলি তালুকদার আরতি, পৌর কাউন্সিলর চঞ্চল কুমার লৌহ, জেলা আইনজীবি সমিতির সহ সভাপতি এ্যাডভোকেট গৌরাঙ্গ দাস, সুনামগঞ্জ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক রবীন আচার্য্য, জেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও মোহনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাস প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র বর্মণ, সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক শীলা বসু, পূজা উদযাপন পরিষদ সদর উপজেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট প্রণব কান্তি দাস নীলু, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সদর উপজেলা শাখার সভাপতি চন্দন কুমার দাস, শ্রীশ্রী তারকব্রক্ষ্র হরিণাম সংকীর্তণ উদযাপন পরিষদেও সভাপতি বিপ্রেশ রায় বাপ্পী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সদর উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক প্রমথ চক্রবর্তী, পুজা উদযাপন পরিষদ পৌর শাখার সভাপতি প্রদীপ কুমার চৌধুরী আচঁল, সাধারন সম্পাদক সন্তোষ রায় সন্তো প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্থানীদের হাত থেকে পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদশ বির্নিমাণে তৎকালীন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্টির সাড়ে সাতকোটি বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। দেশ স্বাধীনতার জন্য তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ নয়মাস মরণপণ লড়াইয়ে ত্রিশলাখ শহীদ ও দু”লাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই লাল সবুজের পতাকা বহনকারী বাংলাদেশটিতে সম্প্রীতির একটি উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সুনামগঞ্জের প্রতিটি ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতির একটি দীর্ঘ মিলবন্ধন খোঁজে পাওয়া যায়। আগামী প্রজন্মের যারা আগামীদিনে এই জেলায় আসবেন এবং নেতৃত্বে দিবেন তারা ও তাদের পূর্বপূরুষদের সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে একটি নিরাপদ বাসযোগ্য সুনামগঞ্জ জেলা গড়ে তুলতে সবাই সমুন্নিত প্রয়াসে কাজ করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার এম এন মোর্শেদ সম্প্রতি দেশের দশটি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপুল সংখ্যক মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এবং যারা বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুুত সুস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থার লোকজন যেমন এই বন্যার্ত মানুষজনকে খাদ্য সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছেন, ঠিক তেমিন দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষজন ও তাদের সাধ্যমতো বন্যার্তদের জন্য সাহার্য্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটাই নতুন বাংলাদেশ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ এখানে কোন বৈষম্যর স্থান নেই। তিনি আরো বলেন, অতীতের মতো জেলা পুলিশ প্রশাসন যেমন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছেন ঠিক তেমনিও বর্তমান পুলিশ প্রশাসন সকল ধর্মের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা বাধান নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের নিরাপদ জেলা গঠনে সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করে যাওয়ার দৃঢ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
পরে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে সনদপত্র ও পুুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দরা। এছাড়াও রাতে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পীরা ধর্মীয় গান পরিবেশন করবেন।