ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর প্রভাব পড়েছিল চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে। যদিও সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে ডাক্তারদের বৈঠক হলে শাটডাউন তুলে নেওয়ার কথা জানান তারা। সারাদেশের মত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের (কমেক) ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও দায়িত্বপালন থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিলেন। অভিযোগ উঠেছে কর্মবিরতি চলাকালীন যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পেয়ে কমেক-এ এক শিশুর মৃত্যু হয়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই জানে না।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো জানান, কর্মবিরতি চললেও সরকারি-বেসরকারি ভাবে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকরা সেবা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত জরুরি বিভাগসহ সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক ছিল। ইন্টার্ন না থাকায় ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে একটু সমস্যা তো হবেই।’
এদিকে, চিকিৎসকের কর্মবিরতির পর তিন মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ওই দিন বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়। পরে জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক এসে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চলে যান বলে জানিয়েছেন নিহত শিশুর পিতা গোলাম মোস্তফা। তিনি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ির বাসিন্দা।
মারা যাওয়া শিশুর বাবা দিনমজুর গোলাম মোস্তফা ও মা নাজনিন সুলতানা বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাই শনিবার বিকালে। রোববার দুপুরে শিশুর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ডাক্তারের রুমে গিয়ে দেখি ডাক্তার নেই, নার্সদের বললে তারাও কোন ব্যবস্থা নেননি। পরে আমাদের অবুঝ শিশুটির করুণ মৃত্যু হয়।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে শিশুটির মা বলেন, আপনারা আসার পর চিকিৎসক এসে মারা গেছে বলে চলে যান।
সরেজমিন শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বিকাল ৪টা ৩ মিনিট পর্যন্ত মেডিকেল সার্জন বা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষে কেউ নেই। নার্সরা আগে দেওয়া মেডিসিন ছাড়া আর কিছু দিতে পারছেন না।
শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের মারধর ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছিল চিকিৎসকরা। এর ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও শাটডাউন দিয়ে কর্মবিরতিতে যান।
এ রিপোর্ট লেখার সময় (শাটডাউন তুলে নেওয়ার আগে) নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরাও কর্মবিরতি পালন করছি। বেলা দুইটা থেকে আমরা অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর্মবিরতিতে রয়েছি।’
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা ছিল আমাদের। তবে শিশু মৃত্যুর বিষয়টি আমার জানা নেই।’