হুমায়ুন কবীর রিন্টু, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের এক পাতী আওয়ামী লীগ নেতার বিরূদ্ধে মসজিদের ইমামকে অসম্মান, অমর্যাদা ও ইমামতির দ্বায়িত্ব থেকে বরখাস্তের অভিযোগ উঠেছে। বরখাস্ত হওয়া ইমামের নাম মাওলানা হেদায়েত হোসাইন। তিনি উজিরপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন উজিরপুর ইসলামিয়া নুরানী মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তাকে বরখাস্ত করায় তিনি সোমবার (২ সেপ্টম্বর) মসজিদ ও মাদরাসার দায়িত্ব ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাকে বরখাস্ত করেন উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) তাকে বরখাস্ত ও মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর সোমবার সকাল আটটার দিকে তাকে মসজিদ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের সহযোগিতা ও সরকার পতনের পর সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সালমান এফ রহমানের সমালোচনা করে গত জুমার খুতবায় বক্তব্য রাখায় তার উপর খড়গ নেমে আসে বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী ইমাম মুফতি এম হেদায়েত হোসাইন নড়াইল সদরের হবখালী ইউনিয়নের কাগজীপাড়া গ্রামের আব্দুল গফফার মোল্যার ছেলে। তিনি বিভিন্ন সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি, এনটিভি, বাংলাভিশন, চ্যানেল ২৪ ও দেশটিভিতে বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় ইসলামী কলাম ও কয়েকটি ইসলামী পুস্তকের লেখক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুফতি হেদায়েত হোসাইন নড়াইলে ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। তখন থেকেই তাঁকে চাপ দিতে থাকে মসজিদ কমিটির লোকজন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট মসজিদের মুসল্লিদের মিষ্টিমুখ করান তিনি। সর্বশেষ গেল শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জুমার খুতবায় দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিশেষত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিতর্কিত সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সমালোচনা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে আনিস তার স্ত্রীকে নড়াইল বরাশুলা শিশু সদন কমপ্লেক্স আলিম মাদরাসায় চাকুরী দিয়েছেন। দলের প্রভাব খাটিয়ে হবখালি আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েছিলেন। তার বিরূদ্ধে বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ উপার্জন ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন, কিন্তু পদের নাম বলতেন না।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইমাম মুফতি হেদায়েত হোসাইন বলেন, আমার ওপর অর্পিত ইমামতি ও মাদরাসার শিক্ষকতার দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করেছি। আল্লাহর কসম করে বলতে পারি ছুটি ছাড়া একদিনও একটা ক্লাস বাদ দেইনি। নিয়মিত নামাজ পড়িয়েছি। কিন্তু বিচারপতি মানিক ও সালমান এফ রহমানের সমালোচনা করে জুমার খুতবায় বক্তব্য রাখায় আমাকে পদচ্যুত করা হলো। তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আহত হওয়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য আমি অর্থ সংগ্রহ করেছিলাম। তখন থেকেই মসজিদ কমিটির আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হই আমি। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয় জানার জন্য মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমানকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।