দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি, যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক হলেও ভারতের অনিহার কারণে রেলসেবা এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। রেলপথে কবে নাগাদ বাণিজ্য এবং যাত্রী যাতায়াত স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি কেউ।
ট্রেনে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন এবং যাত্রীদের যাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে রেল ও সড়কপথে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এবং যাত্রীরা যাতায়াত করে থাকেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই সড়কপথে যাত্রী যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহন সীমিত পরিসরে চলমান থাকলেও রেলপথে যাত্রী, পণ্য পরিবহন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
গত ২৫ জুলাই থেকে সড়কপথে পুরোদমে শুরু হয়েছে আমদানি-রপ্তানি ও যাত্রী চলাচল। তবে রেলপথে বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচল শুরু করতে বাংলাদেশের রেল কর্তৃপক্ষ ভারতের রেল মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানালেও সাড়া মিলছে না।
রেলপথে বেশিরভাগ শিল্পের কাঁচামাল, বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল, সার, সিমেন্ট তৈরির উপকরণ ও কৃষি যন্ত্রাংশ আমদানি হয়ে থাকে।
বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টাস এন্ড এক্সপোর্টাস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, সড়কপথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়, তার অর্ধেক রেলপথে আমদানি হয়। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রেলপথে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন বন্ধ আছে। ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর খুলনা-কলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির চলাচল শুরু হয়। এ পথে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে আমদানি বাণিজ্য, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও যাত্রীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, রেলপথে শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও কৃষিপণ্য বেশি আমদানি হয়। ট্রাকের চেয়ে ট্রেনে ভাড়াও কম। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় কলকাখানার উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হবে কেউ জানে না।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেল স্টেশন মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে রেলরুটে যাত্রী পরিবহন করে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ এবং ৩টি কোম্পানি ওয়াগান, পার্সেল ভ্যান ও সাইড ডোর কন্টেইনারের মাধ্যমে আমদানি পণ্য পরিবহন করে আসছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তাজনিত কারণে গত ১৯ জুলাই দুই দেশের মধ্যে রেলপথে বাণিজ্য এবং যাত্রী যাতায়াত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষ। তবে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেটে যাওয়ায় সেবা চালুর জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানালেও এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি।
তবে শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, খুলনা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন এবং বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে পণ্য পরিবহন ট্রেনটি চালুর বিষয়ে ভারতের বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদের। তারা জানিয়েছেন দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে শিগগিরই চালু করা হবে।