ঢাকা
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৪:৫০
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪

দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে লক্ষ্মীপুর, বানবাসিদের দুশ্চিন্তা কবে বন্যার পানি কমবে

মাসুদুর রহমান খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানিতে এখনো ডুবে আছে গ্রামের পর গ্রাম।বন্যাকবলিত পাঁচটি উপজেলার হাজার হাজার পরিবারের দুশ্চিন্তা এখন একটাই, কবে বন্যার পানি কমবে। রৌশন আরা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হোগলডরী গ্রামের বাসিন্দা।তাঁর চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা আর চাপা কষ্ট। টানা ২৩ দিন ধরে পানিবন্দী। বসতঘর থেকেও পানি নেমেছে অল্প। দুই দিন আগে পানি যা দেখেছেন, আজও তেমন দেখেছেন। পানি যেন কমছেই না। বন্যার পানিতে কখনো তাঁরা অভ্যস্ত নন। এ কারণে আকস্মিক বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা। শুধু রৌশন আরা নন, এখন লক্ষ্মীপুরের বন্যাকবলিত হাজার হাজার পরিবারের দুশ্চিন্তা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া জানান, এখনো জেলার ২ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ১৩ হাজার ৩৪ জন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর, চর শাহী, বাঙ্গাখা, চন্দ্রগঞ্জ, পার্বতী নগরসহ ২০-২৫টি ইউনিয়নে পানি রয়েছে। এসব এলাকায় ত্রাণতৎপরতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বাঙ্গাখা এলাকার হাফিজ উদ্দিনের ধানচাল তো ভেসে গেছেই, বিছানা-বালিশ কিছুই টিকে নেই। নষ্ট হয়েছে খেতের ফসলও।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, খালি ঘরের ধান চাইল ন। ঘরের খ্যাতাবালিশ, কম্বল, বিছানাপত্র যা আছিল, সব ভিজছে। কিছু বাকি নাই। খেতে কৃষি কইরতাম। ব্যাক খেত পানিত ভাসি গেছে। সামনে কেমনে চইলব, কী করমু খোদায় জানে। সামনে যে খামু, এই ব্যবস্থা নাই। কৃষিকাজ কইরতাম, সেই খেতও অন পানির তলে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার অনেক বাসাবাড়ি, দোকানপাট এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। অনেক স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের প্রাঙ্গণজুড়ে বন্যার পানি থই থই করছে। কিছু কিছু স্থানে সরলেও পুরোপুরি না কমায় জমে থাকা কালো পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। লক্ষ্মীপুরের সমতল ভূমি থেকে মেঘনা নদীর পানির স্তর অনেক নিচে রয়েছে। ভুলুয়া, রহমতখালীসহ জেলার খালগুলো দখলে সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে মেঘনা নদীতে বন্যার পানি নামতে পারছে না বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

দীর্ঘমেয়াদি বন্যার পেছনে খালে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন স্থানীয় লোকজন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন। আর পানিপ্রবাহ কমার পেছনে খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, খালের গভীরতা কমে যাওয়া, খালে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি, খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, খালের ওপর অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকে দায়ী করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান জানিয়েছেন, বর্তমানে লক্ষ্মীপুরে যে বন্যা হচ্ছে, তার বেশির ভাগ অংশই জলাবদ্ধতা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, লক্ষ্মীপুরের বিশাল জনগোষ্ঠী পানিবন্দী হলেও মেঘনা নদীতে পানি নেই। জলাবদ্ধতার মূল কারণ খাল দখল ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন। এ কারণে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে পারেনি। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে দূষিত পানিতে বাড়ছে রোগবালাই। দূষিত পানিতে বাসিন্দারা ডায়রিয়া, খোসপাঁচড়াসহ নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বন্যার পানি মাড়িয়ে চলাচল করায় তাদের পায়ের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত দেখা দিয়েছে। বানভাসিরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন বন্যার পানি জমে থাকায় তা দূষিত হয়ে পড়েছে। কোথাও পানি এক মাস ধরে আটকা, কোথাও ২০ ২৫ দিন। পানি লাগলেই চুলকানি শুরু হয়। এলাকায় বেশির ভাগ লোকজনের চর্মরোগ। কারও চুলকানি, কারও পায়ের তলা বা আঙুলের ফাঁকে ক্ষত দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে ত্রাণের পাশাপাশি চর্মরোগের ওষুধও প্রয়োজন। পানিবন্দী অনেকেই দূষিত পানি মাড়িয়ে দূরদূরান্তে গিয়ে ওষুধ আনতে পারেন না। আর্থিক সচ্ছলতাও নেই।

লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। জেলার ৫৮টি মেডিকেল টিম সেবা দিচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা দুর্গম এলাকায় বানভাসিদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিচ্ছেন। ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা যায়। এর মধ্যে পানি ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র এবং পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা একাকার হয়ে জীবাণু চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বন্যায় সংক্রামক রোগের বিস্তার বেড়ে যায়।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram