শেখ দীন মাহমুদ, খুলনা (পাইকগাছা) প্রতিনিধি: খুলনা সদর থানায় ছাত্রদল নেতাকে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনার ১২ বছর পর মামলা হয়েছে। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগী খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদুল হক টিটো বাদী হয়ে খুলনা মহানগর হাকিমের আদালতে মামলাটি করেন। সাবেক এ ছাত্রদল নেতা খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া মেইন রোডের এস এম এমদাদুল হকের ছেলে।
মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- সাবেক এসআই মো. শাহ আলম, মো. জেলহাজ্ব উদ্দিন, তৎকালীন পুলিশের সোর্স কাসেম, জাহিদ, তারক, ইস্রাফিল, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তৎকালীন কমিশনার শফিকুর রহমান ও তৎকালীন ডিসি (সাউথ)।
আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে আগামী ১৭ অক্টোরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে কেএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার শফিকুর রহমান ও ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ওসি এস এম কামরুজ্জামানসহ আসামিরা মাথায় হেলমেট, হাতে লাঠি ও সরকারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাহমুদুল হক টিটো ও ফেরদৌস রহমান মুন্নাকে আটক করে। তাদের হ্যাণ্ডকাপ পরিয়ে ও চোখ গামছা দিয়ে বেধে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে মাহমুদুলকে হ্যাণ্ডকাপ পরা অবস্থায় থানা অভ্যন্তরে ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়। পুলিশের বেধড়ক মারধরে বাদী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কামরুজ্জামান তখন পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘শালার জ্ঞান ফেরা, আমাদের আরো কাজ বাকি আছে।’ তখন আসামি এসআই মো. জেলহাজ্ব উদ্দিন চোখে মুখে পানি দিয়ে তার জ্ঞান ফেরান।
তিনি কোনভাবেই বসতে পারছিলেন না। আসামিরা তাকে বার বার লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে তৎকালীন ওসি বাদীর পেটে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। বলে-‘ শালাকে ক্রসফায়ারের জন্য গাড়িতে উঠা, সব জানতে পারবো। তখন বাদী মেঝেতে পড়িয়া থাকলে পুনরায় আসামিরা পিটাতে থাকে। এতে তার হাড় ভেঙে যায় ও জখম হয়ে জ্ঞান হারান। পুলিশ কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশে পরে তাদের জেলহাজতে রাখা হয়। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল পুলিশ মিথ্যা মামলা দায়ের করে। যার প্রধান আসামি বাদী ও ছাত্রদল নেতা ফেরদৌস রহমান মুন্না।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল (রোববার) হরতালের সময় গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদল নেতা এসএম মাহমুদুল হক টিটো চোখ বেঁধে ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন ওসি কামরুজ্জামান। এ নিয়ে পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি এস এম কামরুজ্জামানসহ সিপাহী আবু সুফিয়ান, সিপাহী মামুন আখতার এবং ওসি’র গাড়িচালক সুধাংশুকে প্রত্যাহার করা হয়।