আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি: আটঘরিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় চলছে বেগুনের আবাদ। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেগুনের আবাদ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বেগুনের আবাদ ধরা হয়েছে ১৩৪ হেক্টর। যা গতবছর ছিলো ১৩২ হেক্টর। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় বাম্পার ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত বেগুন পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন হাট ও বাজারে। বাজারে ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা।
আটঘরিয়া উপজেলার আওতাধীন মাজপাড়া ইউনিয়নের চলতি মৌসুমে সফল বেগুন চাষী হজরত আলী জানান, আমি প্রতি সপ্তাহে আমার ক্ষেত থেকে ৩০ মন করে বেগুন উঠাচ্ছি। গত বছর তিন পোয়া জমি থেকে তিন লক্ষ্য টাকার বেগুন বিক্রয় করেছি। এবার দেড়বিঘা জমিতে বেগুন লাগিয়েছি। মহিলা ও পুরুষ শ্রমিকসহ সারবিষ, কীটন্যাশক বাবদ আমার খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। এবার ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৪ লক্ষ টাকার বেগুন বিক্রয় করতে পারবো বলে আশাবাদী।
উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঋতুভেদে প্রায় সব ধরনের সবজি উৎপন্ন হয় আটঘরিয়ায়। এখানে ধান, গম, পাট থেকে সবজি চাষে লাভ বেশি হওয়ায় সবজির প্রতি অধিক হারে ঝুকছেন এ এলাকার কৃষকরা। অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার প্রত্যেক কৃষকই সর্বনিম্ম ৫ কাঠা থেকে সর্বোচ্চ দুই বিঘা পর্যন্ত জমিতে বেগুনের চাষ করছেন।
এখানকার কৃষকরা জানান, অন্যান্য সবজির তুলনায় সারা বছরই বেগুনের ভালো দাম পাওয়া যায়। বেগুন চাষ করে তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। বেগুন চাষিরা জানান, বেগুন চাষে বোরো ধান আবাদের চেয়ে পানি কম লাগে। সার এবং শ্রমিক খরচও অনেক কম। তুলনামূলকভাবে বাজারে মূল্য বেশি। এক বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
ওই জমি থেকে বেগুন পাওয়া যায় ১২০ থেকে ১৫০ মণ। ওই এলাকার বেগুন চাষিরা জানান, বেগুনের চারা রোপনের এক মাস পর থেকেই ফলন শুরু হয়। এক টানা ৬ মাস এ ফলন অব্যাহত থাকে। ফলন শুরুর পর থেকেই সপ্তাহে দুইবার করে ক্ষেত থেকে বেগুন তোলা হয়। সপ্তাহের দুইদিনে ৮থেকে ১২ মণ তোলা হয়। বাজার ভালো হলে প্রতি মণ বেগুন ১২'শ থেকে ১৬'শ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।
চাঁদভা বাচামারার সবজির আড়ৎদার আব্দুল হক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার আড়ৎতে প্রতিদিন দেড়শত মন সবজি আমদানি হয়। আটঘরিয়া উপজেলার এলাকা -চাঁদভা, মাজপাড়া, চাটমোহর, মুলগ্রাম, টেবুনিয়া, দেবোত্তর, একদন্ত, গোড়রীসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ পযার্য়ের কৃষক এখানে বেগুন বিক্রি করতে আসে। সবজির বাজার মূল্য বরবটি ১৮'শ টাকা, বেগুন ১৬'শ টাকা, লাউ ১ পিস ২২টাকা, ঢেড়শ ৭'শ থেকে ৮'শ টাকা, উশি ৮'শ, পুল্লা ১ হাজার টাকা।
আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সজিব আল মারুফ জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের বেগুন আবাদ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো বারি বেগুন ৫, লুনা, নাফা, পার্পল কিং, বারি বেগুন ১২ ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, নিরাপদ উপায়ে বেগুন উৎপাদন করতে কৃষকদের সবসময় আমরা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছি।