মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল: কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট তানজিম সরোয়ার নির্জরের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিহত নির্জরকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
জানাজায় ঘাটাইল এরিয়ার ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ মাসীহুর রহমান, যমুনা ক্যান্টেনমেন্টের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মামুনুর রশীদ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার বিপুল সংখ্যক লোক অংশ নেন। জানাজা নামাজে পরিবারের সদস্য, সেনা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ছাড়াও স্থানীয় জনগন অংশ নেয়।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হেলিকপ্টার যোগে নিহত নির্জররের লাশ ডিস্ট্রিক গেইট এলাকার হেলিপ্যাডে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত তানজিম সরোয়ার নির্জর সারোয়ার জাহান ও নাজমা বেগমের একমাত্র ছেলে। তার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামে। তার মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ শুনে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। মা, পরিবারের অন্য সদস্য, স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে তার বাড়িতে ছুটে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নিহত সেনা কর্মকর্তার মা ও স্বজনরা জানান, পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপন করে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে গত ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন। পরিবারের লোকজন সেনা কর্মকর্তা নির্জরের হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবী করেন।
নিহত সেনা কর্মকর্তার বোন তাসনুভা ছরোয়ার সূচি বলেন, আমার ভাই ডিসেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন পদে পদন্নোতি পেত সে জন্য সে ভালো ভাবে কাজ শুরু করেছিলো। আমরা আগামী বছর বিয়ে করানোর জন্যও পাত্রী দেখা শুরু করেছিলাম। গতকাল ফোন করে আমাকে বললো যে আপু আমাকে পিঠা খাওয়াবা কবে আমি মাংস পিঠা খাব আর পিঠা খাওয়াতে পারলাম না আমার ভাইটাকে। আমার ভাই বললো যে আপু আমি একটি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো অভিযান শেষ করে আমি নিরাপদ জায়গায় গিয়ে কল দিবনি চিন্তা করোনা। আর আমার ভাই কল দিলো না।
নির্জরের মা নাজমা আক্তার খান বলেন, আমার ছেলে রাতে কল দিয়ে বললো মা আমি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো শেষ করে তারপর কল দিবনি, আমার ছেলে আর কল দিলো না, আমার ছেলে হত্যার বিচার দাবী করছি।
নির্জরের বাবা সারোয়ার জাহান বলেন, সকালে কল আসে নির্জর মারা গেছে আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না কি থেকে কি হয়ে গেল। দেশের জন্য আমার ছেলে জীবন দিছে আমি আমার ছেলের হত্যা কারীদের বিচার দাবী করছি। আমার সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষ ছিলো আমার ছেলে সেও এখন হারিয়ে গেলো।
উল্লেখ্য, আজ ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প হতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অভিযান পরিচালনা করার সময় ৭/৮ সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সরোয়ার নির্জর (২৩) ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিম সরোয়ার নির্জরকে ছুরিকাঘাত করলে গুরুতর আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে লেফটেন্যান্ট তানজিম সরোয়ার নির্জরকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।